ঢাকারবিবার, ৩রা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ১০:২২
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রাষ্ট্রপতিকে অপসারণে ঐকমত্য গড়তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দৌড়ঝাঁপ

নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ২৭, ২০২৪ ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ
পঠিত: 15 বার
Link Copied!

রাষ্ট্রপতি পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে সরানোর পক্ষে ঐকমত্য তৈরির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। গতকাল শনিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে।

এর আগে শুক্রবার তারা আলোচনা করেন জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে। আজ রবিবার তারা ১২ দল এবং গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে বসবেন।

গতকাল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণে দলের সিদ্ধান্ত কী হবে তা জানাবেন তারা। জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেছেন, তার অতিদ্রুত রাষ্ট্রপতি পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর অপসারণ চান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা জানান, সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে যেতেই হবে। অধিকাংশ দলই রাষ্ট্রপতিকে অপসারণে কালক্ষেপণ চায় না।

এদিকে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈষম্য ও নাগরিক কমিটির সাত নেতা আলোচনা শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ২৩ অক্টোবর আমরা জাতীয় ছাত্র ঐক্যের ডাক দিয়েছিলাম। যেসব গণতান্ত্রিক দল আমাদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ বিলোপের প্রাথমিক ধাপে শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছি। ফ্যাসিবাদ বিলোপের আরেকটি বাধা হিসেবে আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ। আমাদের নতুন যে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি। বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করেছি। সেখানে তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রথমটি হচ্ছে—সেকেন্ড রিপাবলিক কীভাবে গঠন করা যায় এবং ঘোষণা দেব—তা নিয়ে আলোচনা করেছি। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে কীভাবে দ্রুততম সময়ে অপসারণ করা যায় এবং কীভাবে রাজনৈতিক সংকট দূর করা যায়—তা নিয়ে কথা বলেছি। তৃতীয়ত, জাতীয় ঐক্যকে ধরে রেখে কীভাবে সরকার পরিচালনা করা যায় তা নিয়ে কথা বলেছি।’

হাসনাত বলেন, ‘বিএনপি আমাদের সব কথা শুনেছে। তারা জানিয়েছে, আমাদের বার্তা নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করবে। পরবর্তী সময়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।’ জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকে রাষ্ট্রপতি অপসারণ ইস্যুতে তারা একমত পোষণ করেছে বলেও জানান হাসনাত। তিনি বলেন, ‘একই ইস্যুতে আমারা ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারাও নৈতিকতার জায়গা থেকে চুপ্পুর অপসারণ চায়।’ ভবিষ্যতে এসব বিষয় নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট ও গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে বলে জানান হাসনাত আবদুল্লাহ। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া না হলেও রাষ্ট্রপতিকে যে যেতেই হবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

গতকাল বিকালে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ও নাগরিক কমিটির সাত জন অংশ নেয়। তারা হলেন—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ, সমন্বয়ক রিফাত রশিদ, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, মুখপাত্র সামন্তা শারমিন, সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং সদস্য আরিফুল ইসলাম আদিব।

বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব ছাড়াও ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও যুগ্ম-মহাসচিব শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।

প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতির দাবি তোলার পর ২৩ অক্টোবর সালাহউদ্দিন আহমেদসহ বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের তিন জন নেতা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে এ মুহূর্তে কোনো সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি না করার কথা বলেছিলেন। দলটি মনে করে, এ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা হলে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট দেখা দেবে, সেটা বিএনপি চায় না। এরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতির বিষয়ে জাতীয় ঐক্য তৈরির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের বাসায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও যোগ দেন। আন্দোলনের ছাত্র নেতৃত্ব ও নাগরিক কমিটি তাদের দাবিতে অনড় থেকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে সরানোর ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে চাইছে।