উৎসবমুখর সন্ধ্যায় বিষ্ণোই গোষ্ঠীর সদস্যরা প্রকাশ্যে বাবা সিদ্দিকীকে খুনের পর নড়ে বসেছে বলিউড। এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সালমান খানের নিরাপত্তা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা অনিশ্চয়তা। প্রতিদিন নানাভাবে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়ার চিঠি পাওয়ায় দু-চোখ এক করতে পারছেন না সালমানের ভাই আরবাজ, সোহেল। গোটা খান পরিবার রীতিমতো আতঙ্কে কাটছে প্রতিটি মুহূর্ত। যদিও কাজ থামাননি ভাইজান। ‘বিগ বস’- এর শুটিং, ছবির শুটিং সবই চলছে। কিন্তু সর্বক্ষণই তিনি রয়েছেন নিরাপত্তা বলয়ের মাঝে।
এতকিছুর পেছনে শুধু অভিযোগ একটাই— বলিউড ভাইজান রাজস্থানের কঙ্কানি গ্রামে ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ সিনেমার শুটিং করতে গিয়ে কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা করেছেন।
দুই দশক আগের সেই ঘটনার পর থেকেই বিষ্ণোই গ্যাংয়ের নিশানায় সালমান। একাধিকবার ভাইজানকে খুনের হুমকি দিয়ে খবরের শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছেন কুখ্যাত গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই। চলতি বছর থেকে সেই উপদ্রব আরও বেড়েছে।
মাসখানেক আগে গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে গুলি চালানো। বিদেশে সালমানের বন্ধু-গায়কের বাড়িতে হামলা, তারপর গত সপ্তাহে সালমান ঘনিষ্ঠ বাবা সিদ্দিকী খুন! একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে ভাইজানকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বিষ্ণোই গ্যাং। যার জেরে ওয়াই ক্যাটাগরির পাশাপাশি সালমান খানের নিরাপত্তা বর্তমানে আরও জোরদার হয়েছে। দুবাই থেকে ২ কোটি টাকা খরচ করে বুলেটপ্রুফ গাড়িও আনিয়েছেন ভাইজান।
কিন্তু সারাজীবন কি এভাবে প্রাণভয় বয়ে বেড়াতে হবে তাকে? কী করলে বিষ্ণোইদের থেকে মুক্তি পাবেন সালমান খান? সেই প্রশ্নের উত্তর জানিয়েছে রাজস্থানের সেই বিষ্ণোই সম্প্রদায়ই। যারা কৃষ্ণসার হরিণকে দেবতাজ্ঞানে পূজা করেন।
বিষ্ণোইরা মনে করেন, কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা করে গর্হিত অপরাধ করেছেন সালমান, যা কিনা বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের আচারবিধির বিরুদ্ধাচরণ। ‘অল ইন্ডিয়া বিষ্ণোই সমাজ’-এর সম্পাদক হনুমানরাম বিষ্ণোইয়ের জানান, বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের থেকে ক্ষমা পেতে হলে সেই ব্যক্তিকে অবশ্যই রাজস্থানের বিকানিরে অবস্থিত মুক্তিধাম মুকামে যেতে হবে।
উল্লেখ্য, এই মন্দির বিষ্ণোইদের সবচেয়ে পবিত্র ধর্মীয় স্থান। তাদের সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, যদি কোনো ব্যক্তি অপরাধ করেন, তবে তার মধ্যে অবশ্যই অনুশোচনাবোধ থাকতে হবে, যা তাকে প্রায়শ্চিত্তের পথে নিয়ে যাবে।
কেউ যদি বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের সঙ্গে কোনোরকম অপরাধ বা অন্যায় করেন তাহলে তাকে মুক্তিধাম মুকামে গিয়ে পুরো সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে হয়। শুধু তাই নয়, নির্ধারিত পদ্ধতিতে ক্ষমা চাওয়া হলে, সেটা গ্রহণযোগ্য হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে যাচাই করেন বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের সদস্যরা।
হনুমানরামের মন্তব্য, ‘তাদের সম্প্রদায়ভুক্ত মোট ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ। যতক্ষণ না সালমান খান ক্ষমা চাইছেন, ততক্ষণ তিনি ‘শাস্তির প্রাপক’। তবে ক্ষমা চাইলে আবার আইনি জটিলতায় পড়তে হবে খোদ বলিউড সুপারস্টারকে। কারণ ২০১৮ সালে কৃষ্ণসার হরিণ শিকার মামলায় সালমানকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন নিম্ন আদালত। যদিও সালমান তখন দাবি করেন, তিনি নির্দোষ। এ বিষয়ে রাজস্থান হাইকোর্টের দ্বারস্থও হয়েছিলেন তিনি। মামলাটি বর্তমানে সেখানেই বিচারাধীন।
এদিকে সালমানের বাবা সেলিম খানের মন্তব্য, ‘যে ছেলে ছোট থেকে আজ পর্যন্ত কোনোদিন একটা তেলাপোকা পর্যন্ত মারতে পারেনি, সে কীভাবে হরিণ মারবে? তাই ক্ষমা চাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
একই সুর ভাইজানের সাবেক প্রেমিকা সোমি আলির গালতেও। অভিনেত্রী জানিয়েছেন, সালমান এই বিষয়ে তাকে বলেছিলেন— হরিণ হত্যার বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। শুধু তাই নয়, সালমান খানের হয়ে বিষ্ণোইদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন সোমি।