ঢাকাশনিবার, ৯ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১২:০৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রাজধানীর দুই সিটির ১৮ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ৩, ২০২৪ ৯:৫১ পূর্বাহ্ণ
পঠিত: 30 বার
Link Copied!

এখন সারা বছরই থাকে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব। তবে বর্ষা এলেই এটি বেশি ছড়িয়ে পড়ে। অন্য মশা থেকে এটিকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক দমন না করলে এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন কীটতত্ত্ববীদেরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য বলছে, সাধারণত জুন থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়। কারণ, এ সময় বর্ষাকালের শুরু। বৃষ্টির পানি বিভিন্ন স্থানে জমে থাকে। এর প্রাদুর্ভাব চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তাই সময়টাকে ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার প্রজননকাল ধরে নেওয়া হয়।

যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, রাজধানীতে মৌসুম শুরুর আগেই বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রভাব। বর্ষার মাঝামাঝি সময় এসে আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে এডিস মশাবাহিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এই রোগ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার দুই সিটির ১৮টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে বেশি। এবারও ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

অথচ ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গতানুগতিক প্রস্তুতিতে সীমাবদ্ধ রেখেছে তাদের কার্যক্রম। প্রতি বছর শতকোটি টাকা খরচ করেও রাজধানীবাসীকে মশার কবল থেকে মুক্তি দিতে পারছে না সংস্থা দুটি। নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেওয়া হলেও সবকিছু ব্যর্থ করে দিয়ে অপ্রতিরোধ্য গতিতে বিস্তার হচ্ছে এডিস মশার।

বিগত বছরগুলোতে মশা বা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু এ বছর গতানুগতিক প্রস্তুতিতে সীমাবদ্ধ রয়েছে তারা। দুই বছর আগে মশার উৎপত্তিস্থল খুঁজতে আধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার করেছিল ডিএনসিসি। তবে এবার ডেঙ্গু মোকাবিলায় শহর জুড়ে যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এডিস মশার প্রজননস্থল এবং পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ পরিত্যক্ত পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, আইসক্রিমের কাপ, ডাবের খোসা, অব্যবহৃত টায়ার, কমোড ও অন্যান্য পরিত্যক্ত দ্রব্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কিনে নেওয়ার উদ্যোগ নেয় সংস্থাটি। যদিও এটি তেমন কোনো কাজে আসেনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকার দুই সিটির ১৮টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে বেশি। সেখানে বলা হয়, দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টিতে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর হার বেশি। এর অর্থ হচ্ছে, এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এলাকাগুলো ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

Dengue 1

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে ১২ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে এডিসের ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৪৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পরের অবস্থানে রয়েছে ১৩ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড। এগুলোতে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৪০ শতাংশ। এ ছাড়া ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ৩১ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ, ১৭ ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ২৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো-৪, ১৩, ৫২, ৫৪, ১৬, ৩, ৫, ১৫, ১৭ ও ২৩।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস মশক নিধন কার্যক্রম সম্পর্কে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, মশক নিধনে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম চলমান। এ কাজে মাঠপর্যায়ে আমাদের পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন কীটনাশক, সরঞ্জাম ও জনবল রয়েছে। বাড়ির আঙিনা, ছাদ ও চারপাশে যদি মশার প্রজননস্থল সৃষ্টি হয়, সে সম্পর্কিত তথ্য আমাদের সরবরাহ করার আহ্বান রইল। আমরা যত বেশি তথ্য পাব, মাঠপর্যায়ে আমাদের কার্যক্রম তত বেশি কার্যকর হবে। আমরা মশক নিধন কার্যক্রম আরো বেশি ফলপ্রসূ করতে পারব।

মশক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘মশক ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। সচেতনতা কার্যক্রম হিসেবে কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে নাগরিক কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সোসাইটির সঙ্গে মতবিনিময় সভা করছি। আমাদের দিক থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই।’

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, মশা দুই ধরনের। যত দিন সাধারণ মশার সঙ্গে এডিস মশাকে মেশানো হবে, তত দিন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের আলাদা ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার, যা বছর জুড়ে চলমান থাকতে হবে। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মশা ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি এ কাজে জনগণকেও সম্পৃক্ত করতে হবে।