বায়ু দূষণ বন্ধে সরকার ব্যর্থ, নেই কোন পরিকল্পনা: সবুজ আন্দোলন – Newsroom bd24.
ঢাকারবিবার , ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বায়ু দূষণ বন্ধে সরকার ব্যর্থ, নেই কোন পরিকল্পনা: সবুজ আন্দোলন

Link Copied!

দিন যত যাচ্ছে বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয় ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে বায়ু দূষণ বন্ধে সরকার চূড়ান্ত উদাসীনতা পরিচয় দিচ্ছে যা সাধারণ জনগণের মনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
আজ ৫ ফেব্রুয়ারি পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের উদ্যোগে রাজধানী ঢাকার পুরনো পল্টন মোড়ে ক্যাফে ধানসিঁড়িতে “ত্রি—মাসিক কর্মপরিকল্পনা ও বর্ধিত সভার” আয়োজন করে। সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার’র সভাপতিত্বে অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সবুজ আন্দোলনের উপদেষ্টা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ্যাড. আবদুল কুদ্দুস বাদল, অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মেজবাউদ্দীন মোঃ জীবন চৌধুরী, সবুজ আন্দোলন পরিচালনা পরিষদের অর্থ পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন রুপা, পরিচালক অধ্যক্ষ নাদিয়া নূর তনু, অভিনেতা উদয় খান।

অনুষ্ঠানের সভাপতি বাপ্পি সরদার বলেন, বায়ু দূষণ বন্ধে বর্তমান সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ সেই সাথে নেই কোন কর্মপরিকল্পনা। যার ফলশ্রুতিতে প্রত্যেকটি বিভাগীয় শহরে সাধারণ জনগণকে পড়তে হচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে , যুক্ত হতে হচ্ছে মৃত্যুর মিছিলে। বায়ু দূষণে গড়ে প্রতিবছর বাংলাদেশে ৮০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। যে কোনো সমস্যার থেকে সরকারের উচিত বায়ু দূষণসহ সকল প্রকার দূষণ বন্ধে কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করা।

বায়ু দূষণের ফলে মাথা ব্যাথা, গা বমি , শ্বাসকষ্ট, চোখ ও গলার ক্ষতি, রক্তে অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতা কমে যাওয়া, এ্যাজমা, ক্যান্সার সহ বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়জেষ্ঠ্য মানুষ। ঢাকা শহরে মেট্রোরেল , নির্মানাধীন বিল্ডিং, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, শহরের চারপাশ দিয়ে ইটভাটা, মেডিকেল , কারখানা, মনুষ্য সৃষ্ট বর্জ্যের কারণে অতিরিক্ত বায়ু দূষণ দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা শহর বায়ু দূষণের নগর হিসেবে উঠে এসেছে এক নম্বরে। তার ফলে বর্তমান জিডিপিতে প্রায় সাড়ে চার শতাংশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বায়ু দূষণ জনিত কারণে।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প করছে আমরা অবশ্যই সাধুবাদ জানাই কিন্তু সকল উন্নয়নই জনগণের জন্য । সুফলের চেয়ে যদি কুফল বেশি হয় তাহলে তার সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে। আমরা অবশ্যই সরকারের পাশে আছি। সবুজ আন্দোলন সব সময় জনগণের জন্য কাজ করছে। প্রত্যেকটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করলে বায়ু দূষণসহ সকল প্রকার পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব।

বায়ু দূষণ বন্ধে সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়:

১) ঢাকার চারপাশের শহরগুলোকে নগরায়ন সুবিধার মাধ্যমে ঢাকা সিটির জনসংখ্যা কমানো।
২) শহরের চারপাশ জুড়ে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইটভাটা বন্ধ করে পরিবেশ বান্ধবীর ভাটা চালু এবং উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৩) সরকারের সকল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতি করলে তাদেরকে জরিমানার আওতায় আনা এবং   সকাল— বিকাল নির্মাণাধীন প্রকল্প এলাকায় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে বাধ্য করতে হবে।
৪) ঢাকা শহরের চারপাশের নদী বন্দরের ব্যবহার বাড়ানো এবং নদীর চারপাশ দিয়ে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা।
৫) আবাসন কোম্পানিগুলোতে ২৫ ভাগ সবুজায়ন নিশ্চিত করে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধ্য করতে হবে।
৬) অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করা এবং গাড়ি চলাচলে জোড় বিজোড় সংখ্যা চালু করে একদিন পরপর রাস্তায় গাড়ি নামাতে বাধ্য করতে হবে।
৭) যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করে শহরের বাইরে ময়লা রাখার জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে।
৮) শহরের মধ্যে অবস্থিত সকল প্রকার শিল্প কলকারখানা বিশেষ করে গার্মেন্টস ও কেমিক্যালের কারখানা বন্ধ এবং হাসপাতালের ক্ষতিকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যত্রতত্র না ফেলতে তদারকির ব্যবস্থা করা।
৯) প্রত্যেকের বাসার ছাদে এবং মার্কেট ও দোকানের সামনে গাছের টবের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
১০) সরকার ও সকল পরিবেশবাদী সংগঠনের সমন্বয়ে এস্টেক হোল্ডার বডি তৈরি করতে হবে।
১১) প্রতিদিন দুইবার রাস্তা ঝাড়ু দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং অন্তত একদিন পরপর রাস্তা পানি দিয়ে ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
১২) সরকারি খরচে প্রত্যেকটি গণমাধ্যমে পরিবেশ বিপর্যয় রোধে জনসচেতনতা তৈরিতে বিজ্ঞাপন প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

ত্রি— মাসিক কর্মপরিকল্পনা ও বর্ধিত সভায় সংগঠনকে গতিশীল করতে ১১ দফা কর্মপরিকল্পনা প্রস্তাব করা হয়। নতুন বছর উপলক্ষে উপস্থিত সবাইকে ডায়েরি ও ক্যালেন্ডার উপহার দেওয়া হয়। মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সবুজ আন্দোলন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী হুমায়ুন কবির, আনোয়ার সাদাত সবুজ, সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম চৌধুরী অর্ণব, মো:মেরাজ উদ্দিন, সহ—সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আজাদ ইসলাম, মোঃ রবিউল ইসলাম, মোঃ জাহিদ শিকদার, অর্থ সম্পাদক আলমগীর হোসেন পলাশ, সহ অর্থ সম্পাদক সালমা আক্তার শান্তা, দপ্তর সম্পাদক সোহেল রানা, সহ দপ্তর সম্পাদক আব্দুল আজিজ, নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক এম এ মামুন, নারী ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক ইয়াসমিন আনোয়ার, কেন্দ্রীয় সদস্য জামিল আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ—সভাপতি সেলিনা চৌধুরী, কবি সৈয়দা হাবিবা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকাশ মনি, আইয়ুব আনসারী, ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক নিত্য শিল্পী মাহমুদ আলম, তানিয়া রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নারী ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক সুমি আক্তার ও ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দ।