ভূরুঙ্গামারীতে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় কেন্দ্র সচিবসহ তিন শিক্ষক আটক – Newsroom bd24.
ঢাকাবুধবার , ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২

ভূরুঙ্গামারীতে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় কেন্দ্র সচিবসহ তিন শিক্ষক আটক

Link Copied!

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক কুড়িগ্রাম, পুলিশ সুপার কুড়িগ্রাম, ওসি ভূরুঙ্গামারীসহ রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন। প্রায় তিন ঘন্টা বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে তাঁরা বেড়িয়ে যান।

পরে ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ‍্যালয় কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিবসহ দুই শিক্ষককে আটক করার কথা স্বীকার করে পুলিশ। এদিকে চারজনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হলেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অন্যতম সহযোগী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে আসামী না করায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় চার বিষয়ের পরিক্ষা স্থগিত করেছে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড।

জানাগেছে, থানায় প্রশ্ন বাছাইয়ের (সর্টিং) সময় ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ঐ কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার আব্দুর রহমানের যোগসাজসে বাংলা ১ম পত্রের প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের ভিতর বাংলা ২য় পত্র, ইংরেজি ১ম ও ২য় পত্রের প্রশ্নপত্রের একটি করে খাম ঢুকিয়ে নেন এবং প্যাকেট সীলগালা করে তার ওপর স্বাক্ষর করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান। বাংলা ১ম পত্রের পরীক্ষার দিন যথানিয়মে থানা থেকে বাংলা ১ম পত্রের প্যাকেট এনে তা খুলে বাংলা ২য় পত্র, ইংরেজি ১ম ও ২য় পত্রের খামটি কৌশলে সরিয়ে ফেলেন।

এসময় কেন্দ্রে দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার বোর্ডের দেয়া তালিকা অনুযায়ী পাঠানো প্রশ্নেপত্রের খাম গণনা করার নিয়ম থাকলেও তারা দায়িত্ব অবহেলা করে তা করেননি। পরে প্রধান শিক্ষক কয়েকজন শিক্ষকের সহায়তায় ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের উত্তরমালা তৈরী করে ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে (চুক্তিতে সবসেট) ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি করেন। প্রশ্নফাঁসের ঘটনাটি স্থানীয় সাংবাদিকদের নজরে এলে বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করা হলে তারা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেন। পরে ইংরেজি ২য় পত্র পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় নড়েচড়ে বসেন পুলিশ ও প্রশাসন।

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) ইংরেজি ২য় পত্র পরীক্ষা দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মা, সহকারী পুলিশ সুপার মোর্শেদুল হাসান, ওসি আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল প্রধান শিক্ষকের কক্ষে অভিযান চালিয়ে গণিত, কৃষি বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়নের প্রশ্নপত্র পায়। যে বিষয় গুলোর পরীক্ষা এখানো হয়নি। উল্লেখ্য, পুলিশ জানতে পারে একইভাবে ইংরেজি ১ম পত্রের পরীক্ষার প্যাকেটে এই প্রশ্নগুলো ঢুকানো ছিলো। আর এ প্রশ্নগুলো প্রধান শিক্ষকের কক্ষে রয়েছে নিশ্চিত হয়ে তারা অভিযান চালায়। পরে বিকালে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান ও প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানকে থানায় আনলেও রাতে প্রধান শিক্ষককে আটক করা হয় এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে ছেড়ে দেয়া হয়।

পরে ইংরেজি শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক জোবায়ের হোসাইনকে আটক করে এবং বুধবার ভোরে হামিদুল ইসলাম, সোহেল আল মামুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। মামলার অপর আসামী ক্লার্ক আবু হানিফ পলাতক রয়েছে। প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, পুলিশ সুপার আল আসাদ মোঃ মাহফুজুল ইসলাম, দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে প্রায় তিন ঘন্টাব্যাপি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তার অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা না বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।

ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, তিনজন আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। আরো কারো সম্পৃক্ততা থাকলে তাদেরকেও গ্রেপ্তার করা হবে।

এবিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার মোর্শেদুল হাসান জানান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ট্যাগ অফিসার আদম মালিক চৌধুরি বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। পরবর্তী পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা বোর্ড কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে ৪ বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে, নতুন ভাবে প্রশ্ন তৈরি করে আবারও রুটিন প্রকাশ করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে বোর্ডের চেয়ারম্যান এই বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড দিনাজপুরের চেয়ারম্যান প্রফেসর কামরুল ইসলাম এর নিকট জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।