কোচিং বাণিজ্যে, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের পাঠদানে অনীহা – Newsroom bd24.
ঢাকারবিবার , ২৯ মে ২০২২

কোচিং বাণিজ্যে, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের পাঠদানে অনীহা

সৈয়দ তাওহিদুর রহমান
মে ২৯, ২০২২ ৯:০৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

 

ঢাকাঃ দেশের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের (নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ (উচ্চ মাধ্যমিক স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) মাদ্রাসা (দাখিল, আলিম, ফাজিল, কামিল) ও কারিগরি দীর্ঘদিন যাবত এক শ্রেণির শিক্ষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কোচিং পরিচালনা করে আসছেন।

এটি বর্তমানে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, যেখানে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কোচিং বাণিজ্যের সাথে যুক্ত শিক্ষকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন; যা পরিবারের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপ সৃষ্টি করেছে এবং এ ব্যয় নির্বাহে অভিভাবকগণ হিমশিম খাচ্ছেন।

এছাড়া অনেক শিক্ষক শ্রেণি কক্ষে পাঠদানে মনোযোগী না হয়ে কোচিং এ বেশি সময় ব্যয় করছেন।এক্ষেত্রে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা এবং অভিভাবকগণ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

এ সম্পর্কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ২০১২ সালে একটি নীতিমালা প্রনয়ন করা হয়। কিন্তু সেই নীতিমালা কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বহাল তবিয়তে চলছে কোচিং বাণিজ্য।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ২০ জুন, ২০১২ খ্রি: তারিখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২: ইস্যু করা হয়।পরবর্তীতে ২০১৮ সনে এক রীটের প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট এ নীতিমালাকে বৈধ বলে ঘোষণা করে। 

 

নীতিমালাতে যে সকল বিধি-বিধানে কি উল্লেখ আছে 

এ নীতিমালাতে বলা হয়েছে- এ সম্পর্কিত মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট পিটিশন নং-৭৩৬৬/২০১১ এর আদেশের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপর কোচিং বাণিজ্য বন্ধে একটি গেজেট নোটিফিকেশন বা অন্য কোনরূপ আদেশ প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি ও হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকার কর্তৃক এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হল।

এ নীতিমালা “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২” নামে অভিহিত হবে।’

(ক) আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের পূর্বে বা পরে শুধুমাত্র অভিভাবকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন ।

এ ক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ে মেট্টোপলিটন শহরে মাসিক সর্বোচ্চ ৩০০/-(তিনশত) টাকা, জেলা শহরে ২০০/-(দুইশত) টাকা এবং উপজেলা বা স্থানীয় পর্যায়ে ১৫০/- (একশত পঞ্চাশ) টাকা রশিদের মাধ্যমে অতিরিক্ত সময় ক্লাস পরিচালনার জন্য আগ্রহী শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ফি আকারে গ্রহণ করা যাবে।

দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধান স্ববিবেচনায় এ হার কমাতে/ মওকুফ করতে পারবেন।

একটি বিষয়ে মাসে সর্বনিম্ন ১২(বার) টি ক্লাস অনুষ্ঠিত হতে হবে এবং এক্ষেত্রে প্রতিটি ক্লাসে সর্বোচ্চ ৪০ (চল্লিশ) জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারবে।

এই নীতিমালার আওতায় সংগৃহীত ফি প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিয়ন্ত্রণে একটি আলাদা তহবিলে জমা থাকবে। প্রতিষ্ঠানের পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং সহায়ক কর্মচারীদের ব্যয় বাবদ ১০% অর্থ রেখে।

অবশিষ্ট অর্থ অতিরিক্ত ক্লাসের কাজে নিয়োজিত শিক্ষকদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে অতিরিক্ত সময় ক্লাস পরিচালনার অন্যান্য খরচ উল্লিখিত অর্থের বাহিরে ছাত্র ছাত্রীদের নিকট থেকে আদায় করা যাবে না। এছাড়া কোন ক্রমেই উক্ত খাতের অর্থ অন্য কোন খাতে ব্যয় করা যাবে না।

কোন শিক্ষক তার নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে দৈনিক বা প্রতিদিন অন্য যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সীমিত সংখ্যক {১০ (দশ) জনের বেশী নয়। শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে লিখিতভাবে ছাত্র-ছাত্রীর তালিকা (রোল, শ্রেণী উল্লেখসহ) জানাতে হবে।

কোন শিক্ষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা কোন কোচিং সেন্টারে নিজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত হতে পারবেন না বা নিজে কোন কোচিং সেন্টারের মালিক হতে পারবেন না বা কোচিং সেন্টার গড়ে তুলতে পারবেন না ।

কোন শিক্ষক কোন শিক্ষার্থীকে কোচিং-এ উৎসাহিত বা উদ্বুদ্ধ বা বাধ্য করতে পারবেন না।এমনকি কোন শিক্ষক/শিক্ষার্থীর নাম ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন/প্রচারণা চালাতে পারবে না। কোন শিক্ষক কোন শিক্ষার্থীকে কোচিং-এ আসার জন্য তার নিজ নামে বা কোচিং সেন্টারের নামে কোন রকম প্রচারণা চালাতে পারবেন না।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি কোচিং বাণিজ্য রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রয়োজনীয় প্রচারণা এবং অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময় করবেন।

কোচিং সেন্টারের নামে বাসা ভাড়া নিয়ে কোচিং বাণিজ্য পরিচালনা করা যাবে না।

কোচিং বাণিজ্য বন্ধে প্রণীত নীতিমালায় বর্ণিত পদক্ষেপ কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় অর্থ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহন করবে ।

কিন্তু বাস্তবতা পুরোটাই ভিন্ন, করোনা পরবর্তীতে শহরে, পাড়া-মহল্লায় গ্রামে গঞ্জে সব জায়গায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে নতুন নতুন কোচিং সেন্টার। আবার অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকরা ব্যাচ পড়ানোর আড়ালে চালিয়ে যাচ্ছে এই কোচিং । আবার কেউ কেউ নিজ বাসার এক রুমে চালিয়ে যাচ্ছে  কোচিং বাণিজ্য।  অনেক ক্ষেত্রে তারা শ্রেণিকক্ষে সঠিকভাবে পাঠদান না করে কোচিং ক্লাসে উৎসাহিত করেছে ছাত্র-ছাত্রীদের।

এতে করে প্রাপ্য শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আইন অমান্যকারী এই সকল কোচিং-বাণিজ্য অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছে সাধারণ অভিভাবকরা।

নিউজরুম বিডি২৪।