বিলুপ্তির পথে গারো, হাজং, কোচসহ ৬ জাতিগোষ্ঠীর ভাষা – Newsroom bd24.
ঢাকাশুক্রবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২

বিলুপ্তির পথে গারো, হাজং, কোচসহ ৬ জাতিগোষ্ঠীর ভাষা

আরএম সেলিম শাহী, শেরপুর প্রতিনিধি।
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২ ২:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নিজেদের ভাষায় শিক্ষাব্যবস্থা না থাকায় হারিয়ে যেতে বসেছে শেরপুরের গারো পাহাড়ের গারো, হাজং, কোচ, বানাই ও ডালুসহ ৬ জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ভাষা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাষায় লেখা বই দেয়া হলেও শিক্ষকের অভাবে সেগুলো পড়ানো সম্ভব হচ্ছে না তাদের ছেলেমেয়েদের।
জানা যায়, শেরপুর জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বিশাল এলাকাজুড়ে গারো পাহাড় অবস্থিত। এ পাহাড়ি এলাকাসহ সারা জেলায় গারো, হাজং, কোচ, বানাই ও ডালুসহ ৬ জাতিগোষ্ঠীর অতন্ত ৬০ হাজার মানুষের বসবাস।
এসব গোষ্ঠীর মানুষের আছে আলাদা আলাদা ভাষা, আছে নিজস্ব সংস্কৃতিও। নিজ ভাষায় কথা বলাসহ সামনে এগোতে চান তারা। কিন্তু চর্চা আর সংরক্ষণের অভাবে বিলুপ্তির পথে তাদের মাতৃভাষা।
পরিবারের সুখ-দুঃখের গল্প মাতৃভাষা করলেও এসব জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ভবিষ্যৎ স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে হয় বাংলা ভাষার হাত ধরেই। তাই দিন দিন তাদের মাতৃভাষা হারিয়ে যাওয়ায় আক্ষেপ তাদের।
বয়োজ্যেষ্ঠদের অভিযোগ, তাদের ভাষার চর্চা না থাকায় এখন বাংলা ভাষার মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের মাতৃভাষা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের সীমান্তঘেঁষা বানাইপাড়ায় বেশ কয়েকটি বানাই পরিবার বাস করলেও প্রায় হারিয়েই গেছে ডালু জাতিগোষ্ঠী। ভাষার সঙ্গে হুমকির মধ্যে তাদের সংস্কৃতিও। ভাষার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো রূপ না থাকায় হারাতে বসেছে এ দুটি জাতিগোষ্ঠীসহ ৬টির ভাষা ও সংস্কৃতি।
এ ছাড়া সরকার কয়েকটি জাতিগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে তাদের ভাষায় বই দিলেও তা পড়ানোর মতো কোনো শিক্ষক নেই। তাই নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য বিদ্যালয়ে নিজ ধর্মের শিক্ষক চায় ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আশা দেখানো হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। তাই দ্রুত তাদের মাতৃভাষা টিকিয়ে রাখতে উদ্যোগ নেবে সরকার, এমনটাই প্রত্যাশা ওইসব জাতিগোষ্ঠীর।
বানাইপাড়ার প্রবাধিনী কোচ বলেন, ‘আমরা আমাদের ভাষায় কথা বলতে চাই। কিন্তু বাংলা ভাষায় কথা বলতে বলতে আমাদের ছেলেমেয়েরা আমাগো ভাষা ভুলেই যাচ্ছে। স্কুলে আমাগো ভাষার বই দিছে। কিন্তু সেটা তো পড়ায় না। বাংলাই পড়ায়।’
গজনী এলাকার চাকনী কোচ বলেন, ‘স্কুল-কলেজে আর আমাগো ভাষা শিখায় না। তাই আমাগো পোলাপানরা আমাগো ভাষায় কথা বলতে চায় না। বাংলা ভাষায় কথা কয়।’
স্কুলছাত্র স্বপ্ন হাজং বলেন, ‘আমাগো স্কুলে বাংলা ও ইংরেজি ভাষা পড়ায়। আমাগো ভাষার বই দিছে, কিন্তু স্যার নাই।’
এ বিষয়ে শেরপুরের শিক্ষাবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিটি ভাষা টিকে থাকুক। এসব ভাষা আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির অংশ। সরকার সংশ্লিষ্ট এলাকার স্কুলগুলোতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের ভাষা শেখাতে তাদের ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হোক।’
শেরপুর সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূরে আলম মির্ধা বলেন, ‘পাহাড়ি উপজেলাগুলোতে জাতিগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের জন্য ভাষা পারদর্শী শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
নিউজরুম বিডি২৪।