কেরানীগঞ্জ: এক ভুয়া গ্রাম্য চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় অনিক নামে ১৭ দিনের এক শিশুর পা কেটে ফেলতে হয়েছে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকায় কলাকান্দি গ্রামের আবুল বাশার ও সীমা দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করে শিশু অনিক।
তার মা সীমা বেগম জানান,জন্মের পর থেকে শিশুটি অতিরিক্ত কান্নাকাটি করতো । তাই কান্না কমাতে জন্মের ছয় দিন পর আব্দুল্লাহপুর বাজারের স্বর্ণা ফার্মেসির মালিক কথিত চিকিৎসক ও কবিরাজ দেব কিশোর সরকারের কাছে নিয়ে গেলে ওই চিকিৎসক শিশুকে ঝাড়-ফুঁকের পাশাপাশি ডান পায়ে একটি ইনজেকশন পুশ করেন।এতে শিশুর কান্না আরও বেড়ে যায়। পরদিন একই কাজ করেন ওই চিকিৎসক।
এতে শিশুর শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে, অবস্থা বেগতিক দেখে শিশুটির পরিবার ও সেই কথিত চিকিৎসক মিলে শিশুটিকে প্রথমে গেন্ডারিয়ার আজগর আলী হাসপাতাল হয়ে শ্যামলী স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে দুদিন রাখার পরে অবস্থার আরও অবনতি হলে শিশুটিকে ধানমন্ডির মাদার কেয়ার অ্যান্ড চাইল্ড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ওই হাসপাতালে চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন অবুঝ শিশুটির পায়ে পঁচন ধরেছে, দ্রুত পা কাটা না হলে আরও বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
পরে শিশুটিকে বাচঁতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর শিশু অনিকের ডান পায়ে হাঁটুর নিচের অংশ কেটে ফেলা হয়।
শিশুটির মা সীমা বলেন, ভন্ড ডাক্তারের দেওয়া ইনজেকশনই কাল হলো আমার।ডাক্তারের কারণে আমার সোনা মানিকের পা হারালাম। এই ডাক্তার ঝাড়-ফুঁকের সঙ্গে দুটি ইনজেকশন দিলে আমার ছেলের পায়ের নিচের অংশ কালো হয়ে যায়। এ ব্যাপারে তাকে বললে প্রথমে সে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে, পরে অন্য মানুষের সহায়তায় সে উন্নত চিকিৎসার দায়-দায়িত্ব নিলেও আমার ছেলের পা বাঁচানো গেল না।
ওই গ্রাম্য কবিরাজ দেব কিশোর নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিলেও তার কোন সার্টিফিকেট নেই, তিনি মূলত ফার্মেসিতে তাবিজ-কবচের পাশাপাশি কিছু ওষুধ বিক্রি করেন। তিনি জানান, তার ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা তার, তার বাবাও গ্রাম্য চিকিৎসক ছিলেন। তার ইনজেকশনের কারণে এমন হয়নি বলে দাবি তার।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান বলেন, আমরা নিয়মিত এসব হাতুড়ে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিচ্ছি। এ ব্যাপারে আমাকে কেউ অবহিত করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাহাবুদ্দিন কবির (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেরানীগঞ্জ সার্কেলে) জানান, ‘শিশুটির পা হারানো খুবই দুঃখজনক। পুলিশের পক্ষ থেকে পরিবারটিকে সব রকম সহায়তা কথা জানান তিনি। এ ঘটনায় শিশু অনিকের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।