শাহেদ সাবরিনার মতোই নতুন প্রতারক টিকেএস গ্রুপ – Newsroom bd24.
ঢাকাবুধবার , ১ সেপ্টেম্বর ২০২১

শাহেদ সাবরিনার মতোই নতুন প্রতারক টিকেএস গ্রুপ

মামুন অর রশিদ (ডেস্ক ঢাকা)
সেপ্টেম্বর ১, ২০২১ ৪:৫৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

 

শাহেদ সাবরিনার মতোই নতুন প্রতারক টিকেএস গ্রুপ

 

নেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের থেকে করোনা টেস্ট এর কোন বৈধতা,  ছিলোনা লোক নিয়োগ ও ক্যাম্প স্থাপনের অনুমতি,   তদুপরি জোরেশোরে ই নেমেছিল টিকেএস গ্রুপ।  পরিকল্পিতভাবে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জাকিয়া পারভীনের সিল-স্বাক্ষর জাল করে, ভুয়া প্রজ্ঞাপন ও অনুমতিপত্র তৈরি করে।  তা ব্যবহার করে ঢাকা ও ঝালকাঠি জেলার উপজেলা কো-অর্ডিনেটর এবং ইউনিয়নের ফিল্ড অফিসার পদে কয়েকজনকে নিয়োগ দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, টিকেএস নামক এ নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত কোনো রকম সনদ ও অভিজ্ঞতা নেই। প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ইতোপূর্বে গ্রেফতার সাবরিনার জেকেজি কিংবা প্রতারক সাহেদের রিজেন্টের মতোই অপকর্ম শুরু করেছিল।

 

ভুয়া সনদ

 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাল অনুমোদন করা করোনা টেস্টের নামে পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে।

 

গত ৩১ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া ধারাবাহিক অভিযানে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা ও ঝালকাঠি থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন, প্রতিষ্ঠানটির এমডি আব্দুল্লাহ আলামিন, চেয়ারম্যান আবুল হাসান তুষার ও মার্কেটিং ম্যানেজার মোহাম্মদ শাহিন মিয়া।

 

এ সময় তাদের হেফাজত থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটার, আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড ও ট্যাক্স সার্টিফিকেট বিভিন্ন ধরনের জাল নিয়োগপত্র জব্দ করা হয়।
ডিবি বলছে, চক্রের মূল পরিকল্পনাকারীদের একজন সিআইবির (কেয়ার গিভার ইন্সটিটিউশন অব বাংলাদেশ) মার্কেটিং ম্যানেজার আব্দুল্লাহ আলামিন ও তুষার আলফালাহ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক রিলেশনশিপ ম্যানেজার আবুল হোসেন। আগের স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত কাজের অভিজ্ঞতাকেই তারা অপকর্মে ব্যবহার শুরু করেছিল।

 

বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ও ডিবি-উত্তর) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণিতে অবস্থিত আল-রাজি কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় ফ্লোরকে নিজেদের কার্যালয় সাজিয়ে গত ১১ জুলাই টিকেএস গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান টিকেএস হেলথ কেয়ার সার্ভিস নামক নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান তৈরি করে। এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন করা হয়। আবেদনে তারা দেশের আট বিভাগ, ৬৪ জেলা, ৪৯২ উপজেলা ও ৪ হাজার ৫৬২ ইউনিয়নে বিনামূল্যে করোনা টেস্টের ব্যবস্থাসহ প্রতিষ্ঠানের ৫ হাজার ১২৬ জন সম্মুখ যোদ্ধা প্রস্তুত আছে মর্মে আবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানায়, ভুঁইফোড় এই প্রতিষ্ঠানের বৈধতা ও প্রাতিষ্ঠানিক অস্তিত্ব না থাকায় মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি তারা পাবে না বুঝতে পেরে প্রতারণার আশ্রয় নেয়।

 

চক্রটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, প্রশাসন শাখা-১ অধিশাখার ১৯ জুলাই তারিখের স্বারক সম্পূর্ণ জালিয়াতি করে। এছাড়াও তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জাকিয়া পারভীনের স্বাক্ষর-সিল জালিয়াতি করে নিজেরাই বুথ স্থাপন, স্যাম্পল কালেকশন, লোক নিয়োগ ও ক্যাম্পাস স্থাপনের অনুমতি নিয়ে নেয়।

এই ভুয়া অনুমতিপত্রের মাধ্যমে প্রতারক চক্রটি ঢাকা ও ঝালকাঠি জেলার উপজেলা কো-অর্ডিনেটর ও ইউনিয়নের ফিল্ড অফিসার পদে কয়েকজনকে নিয়োগ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়। স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত কোনো রকম সনদ ও অভিজ্ঞতা না থাকার পরেও শুধু প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়।

 

আব্দুল্লাহ আল আমিন ও আবু হাসান তুষার প্রাথমিকভাবে কোম্পানির প্রোফাইল বানানোর জন্য এক হাজার টাকা খরচ করে। এছাড়াও বিভিন্ন লোগো সম্বলিত আবেদনপত্র প্রিন্টে এক হাজার টাকা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার জন্য ২০০ টাকাসহ মোট আড়াই হাজার টাকা বিনিয়োগ করে সমগ্র বাংলাদেশে ১০০টি ক্যাম্পাস স্থাপন করে। প্রতিটি ক্যাম্পাসের ডিলারশিপ দেওয়ার জন্য তারা কমপক্ষে দুই লাখ টাকা করে মোট দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা করেছিল।

যুগ্ম কমিশনার হারুন বলেন, এর আগেও প্রতারক সাবরিনা ও সাহেদদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। সুতরাং আমরা জানাতে চাই, কেউ প্রতারিত হবেন না। কোথাও টাকা দেওয়ার আগে যাচাই করুন।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। আইজিপির স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। যারাই করোনা পরিস্থিতিকে অপব্যবহার করে জাল-জালিয়াতি প্রতারণার চেষ্টা করবেন তাদের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সারাদেশে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।