হারিয়ে যাচ্ছে আসাম স্থাপত্যরীতির স্থাপনা – Newsroom bd24.
ঢাকাশনিবার , ২৮ আগস্ট ২০২১

হারিয়ে যাচ্ছে আসাম স্থাপত্যরীতির স্থাপনা

লিটন পাঠান, সিলেট প্রতিনিধি ।
আগস্ট ২৮, ২০২১ ৯:৩১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

 

  • আসাম প্যাটার্নের স্থাপনাগুলো আমাদের ঐতিহ্যের একটি অংশ যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে এগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আবার ঐতিহ্যের স্থাপনাগুলোর গুরুত্ব না বুঝে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে খোদ মানুষই এগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে।

ইতিহাস ঐতিহ্যের স্বার্থে প্রাচীন স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ জরুরি বলে জানান তিনি ছোট ছোট ইট, ইটের সুরকি ও চুন মেশানো দেয়াল ও লোহার বা কাঠের কড়ি বর্গার উপর সুরকি-চুনের ঢালাই দিয়ে পাকা বাড়ি। অতিবৃষ্টির জন্য অনেক বাড়ির পাকা দেয়াল হলেও কাঠের কড়ি বর্গার উপর থাকতো ঢেউটিনের চাল মোঘল আমল থেকে শুরু করে উনিশ শতকের প্রথম দিক পর্যন্ত সিলেটের অনেক স্থাপনা ছিল এরকম আসাম স্থাপত্যরীতিতে তৈরি।

আধাপাকা কাঠের নল-বর্গা-কড়িকাঠের মাঝখানে নল-খাগড়া-ইকড়া ঘাস জাতীয় গুল্ম উদ্ভিদের বেড়ার উপর চুনসুড়কির লেপন ও সাদা চুনকাম করা দেয়াল এবং ঢেউ টিনের তৈরি নানন্দনিক স্থাপনা শোভা পেতো সিলেটের অনেক এলাকায়। পরবর্তীতে আসাম স্থাপত্যরীতির সাথে যোগ হয় বৃটিশ স্থাপত্যরীতি। একটা সময় সরকারি বেসরকারি স্থাপনাগুলো আসাম ও বৃটিশ স্থাপত্যরীতির প্যাটার্নে নির্মিত হতে থাকে। সিলেটের ঐতিহ্যের সেই প্রাচীন স্থাপনাগুলো গিলে খেয়েছে ইট-সিমেন্ট ও রডের প্রযুক্তি প্রযুক্তির বদৌলতে আকাশছোঁয়া অট্টালিকার স্বপ্নে প্রাচীন ঐতিহ্য থেকে সরে আসছে মানুষ।

উনিশ শতকের শেষদিক থেকে সিলেটে পাকা বাড়ি ঘর নির্মাণের হিড়িক পড়ে চুন সুরকি আধাপাকা দেয়াল ভেঙে গড়ে তোলা হয় ইট পাথরের তৈরি শক্ত দালান কি শহর, কি গ্রাম সিলেটের সর্বত্রই এখন পাকা দালান গগণচুম্বী অট্টালিকায় ছেয়ে গেছে শহর। প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের গ্রামেগঞ্জেও বহুতল পাকা দালানে ভরে গেছে গ্রামীণ এলাকাগুলো প্রাচীন স্থাপত্যশিল্প আসাম প্যাটার্নের স্থাপনা সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজের (এমসি কলেজ) ছাত্রাবাস। দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনাটি ছিল সিলেটের শতবর্ষের ঐতিহ্য ২০১২ সালে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে যায় প্রাচীন স্থাপত্যকর্ম এমসি কলেজ ছাত্রাবাস।

 

 

সিলেট নগরে আসাম ও বৃটিশ স্থাপত্যরীতির আরো একটি প্রাচীন স্থাপনা ছিল আবু সিনা ছাত্রাবাস ১৮৫০ সালে সিলেট নগরের কেন্দ্রস্থলে ইউরোপিয়ান মিশনারিরা এই ভবনের প্রথম পর্বের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। প্রায় তিন একর জায়গাজুড়ে প্রতিষ্ঠিত এই ভবন আসাম ও বৃটিশ স্থাপত্যরীতির নান্দনিক স্থাপনা। এর সাথে দুইটি বিশ্বযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের বুদ্ধিজীবী হত্যার স্মৃতিজড়িত। পুরাতন মেডিকেল ভবন বা ‘আবুসিনা ছাত্রাবাস ভবন’ নামে পরিচিত এই ভবনটি এ অঞ্চলের শত বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের স্মারক। দীর্ঘদিন থেকে এটি সিলেট এমএজি ওমানী মেডিকেল কলেজের ছাত্রবাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সিলেট জেলা হাসপাতাল।

নির্মাণের জন্য ২০১৯ সালে প্রাচীন এই স্থাপনাটি ভেঙে ফেলা হয় বর্তমানে এই স্থানে হাসপাতালের নির্মাণ কাজ চলছে
এছাড়া সিলেট নগরের চৌহাট্টায় রয়েছে আসাম প্যাটার্নের তৈরি আরও একটি প্রাচীন স্থাপনা। সিলেটবাসীর কাছে এটি সিংহবাড়ি হিসেবে পরিচিতি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ বিভিন্ন গুণীজনের চরণ পড়েছিল এই আসাম প্যাটার্নের বাড়িতে। তাছাড়া সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার চারিগ্রামে অবস্থিত সাজিদ রাজার বাড়িতে রয়েছে আসাম প্যাটার্নের তেরোচালা ঘর। কাঠ-বাঁশের খানার ওপর চুনসুরকি ব্যবহৃত ঘরটিতে রয়েছে নানা কারুকার্য।

সতেরো শতকের প্রথম দিকে নির্মিত এই প্রাচীন স্থাপনাটি এখন ধ্বংসের পথে অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে প্রাচীন এই স্থাপত্যকর্ম,একই উপজেলার কামালপুর গ্রামে রয়েছে আসাম ও বৃটিশ স্থাপত্যরীতির আরও একটি প্রাচীন বাড়ি। ১৯৮৪ সালে নির্মিত তৎকালীন সরকারের ভূমি প্রশাসন ও ভূমি সংস্কারমন্ত্রী এমএ হকের পৈত্রিক ভিটা এটি। ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি পুলিশের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন পদে কমর্রত ছিলেন। সতেরো শতকের শেষ দিকে এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন এমএ হকের পিতা সাহেবজান আলী। এছাড়াও সিলেট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে।

থাকা আসাম ও বৃটিশ স্থাপত্যরীতির স্থাপনাগুলো ধ্বংসের পথে সংরক্ষণের অভাবেই সিলেটের প্রাচীন স্থাপনাগুলো বিলীন হয়ে যাচ্ছে,সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড অ্যানভায়রনমেন্ট এর প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হাই আল হাদি বলেন, আসাম প্যাটার্নের স্থাপনাগুলো আমাদের ঐতিহ্যের একটি অংশ। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে এগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আবার ঐতিহ্যের স্থাপনাগুলোর গুরুত্ব না বুঝে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে খোদ মানুষই এগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে। ইতিহাস ঐতিহ্যের স্বার্থে প্রাচীন স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ জরুরি বলে জানান তিনি এজন্য তিনি সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণের মতামত দেন।

প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষক মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী বাহার বলেন সিলেটের প্রাচীন স্থাপনাগুলো রক্ষা করা খুবই জরুরি কিন্তু কারা সংরক্ষণ করবে। আমরা অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেও আবু সিনা ছাত্রাবাস রক্ষা করতে পারিনি শেষ পর্যন্ত আবু সিনা ছাত্রাবাসের ইতি ঘটলো। সিলেটে এখনও অনেক প্রাচীন স্থাপনা আছে সেগুলো চিহ্নিত করে সংরক্ষণের কাজ করতে হবে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে প্রাচীন স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ করা সম্ভব।

 

নিউজরুম বিডি২৪