ঘুরে দাড়ানোর স্বপ্ন দেখছে পর্যটন কেন্দ্র গুলো। – Newsroom bd24.
ঢাকারবিবার , ২২ আগস্ট ২০২১

ঘুরে দাড়ানোর স্বপ্ন দেখছে পর্যটন কেন্দ্র গুলো।

লিটন পাঠান ( সিলেট প্রতিনিধি।)
আগস্ট ২২, ২০২১ ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

 

ভোলাগঞ্জে খুলেছে পর্যটন কেন্দ্র তাদের চোখে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন।

 

করোনার কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে এমন জনশূন্য ছিল কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্র। দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে আরও অনেক কিছুর মতোই দেশের সকল পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল ও রিসোর্ট বন্ধ ঘোষণা করেছিল সরকার। ফলে দীর্ঘদিন ধরে পর্যটন কেন্দ্রগুলো ছিল জনশূন্য। এতে ক্ষতির মুখে পড়ে যান পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও শ্রমিকরা। তবে সম্প্রতি দেশব্যাপী বিধিনিষেধ শিথিলের অংশ হিসেবে দেশের সকল পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল ও রিসোর্ট (১৯-আগস্ট) থেকে খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। এতে করে ক্ষতির মুখে থাকা ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের চোখে দেখা দিয়েছে ক্ষতি কাটিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন।

সিলেটের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র জাফলং গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত ভারতীয় সীমান্তবর্তী এই এলাকাকে বলা হয় ‘প্রকৃতিকন্যা’। সরকারি ছুটির দিন বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এখানে থাকে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। সেই জাফলং করোনাকালীন নিষেধাজ্ঞায় হয়ে পড়েছিল একেবারেই নীরব। পর্যটনকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে নানা পণ্যের ব্যবসা। কিন্তু কঠোর বিধিনিষেধে পড়ে এখানকার সব দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ ছিল বন্ধ। খুলেই বা কী হবে, পর্যটকই তো নেই! আর পর্যটক নেই মানে ক্রেতাও নেই তবে এবার পর্যটন কেন্দ্র খোলার ঘোষণায় নড়েচড়ে বসেছেন এখানকার পর্যটনকে কেন্দ্র করে উপার্জনে জড়িত থাকা লোকজন।

জাফলংয়ের কসমেটিক্স পণ্যের ব্যবসায়ী আব্দুল কাদির বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দোকানপাট বন্ধ থাকায় খুব কষ্টে দিন যাচ্ছিল। বিকল্প কোনো কর্মসংস্থান না থাকায় আয়-রোজগার ছিল না। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে ছিলাম। অন্য পেশায় যাওয়ার সুযোগ না থাকায় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে চলেছি। এখন সরকার পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ায় এই আর্থিক সংকট কিছুটা হলেও মোকাবেলা করতে পারব জাফলংয়ে পোশাকের দোকান চালান নূর নবী মিয়া। তিনি বলেন, আমাদের প্রধান ক্রেতা এখানে আসা পর্যটকরা। ফলে করোনা আসার পর থেকেই আমরা ব্যবসায়ীরা খুব খারাপ অবস্থায় আছি করোনাকালে আর্থিকভাবে অন্তত কয়েক লাখ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।

তাই পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ায় কিছু বেচাকেনা করে ঋণ শোধ করার চেষ্টা করব। হয়তো ক্ষতি পুষিয়ে আগের অবস্থানে ফিরতে পারব করোনাকালীন বিধিনিষেধে পড়ে হাতে কাজ নেই জাফলংয়ে পর্যটকদের ছবি তুলে দিয়ে আয়-রোজগার করা স্থানীয় ফটোগ্রাফার দেরও পর্যটন কেন্দ্র খোলার ঘোষণা শুনে তারাও স্বপ্ন দেখছেন কাজে ফেরার
জাফলং ফটোগ্রাফার সমিতির সভাপতি সোহেল আহমেদ বলেন, আমাদের সংগঠনসহ ওই এলাকায় প্রায় ৪ শতাধিক ফটোগ্রাফার রয়েছেন। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় সবাইকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে এখন পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ায় আমরা দুইবেলা দু’মুঠো খেয়ে বাঁচতে পারব।

জাফলংয়ের সংগ্রাম ক্যাম্প পর্যটন কেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও জাফলং ভিউ রেস্টুরেন্টের পরিচালক সানি আহমেদ বলেন, পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় এখানকার ব্যবসায়ীরা মানবেতর জীবন যাপন করেছেন হোটেল ব্যবসায়ীরাও বন্ধের সময়ে স্টাফ খরচসহ বিভিন্ন ব্যয় নির্বাহ করে লোকসানের মুখ দেখেছেন
আমার নিজস্ব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কয়েক লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। এবার পর্যটন কেন্দ্র সচল হলেও এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রায় বছরখানেক সময় লাগতে পারে
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার আরেক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র সোয়াম্প ফরেস্ট’ রাতারগুল। মূলত বর্ষায় এখানে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায়।

জলের ভেতর থেকে মাথা উঁচু করে থাকা গাছ-গাছালির সবুজ উপভোগ করতে এখানে ছুটে আসেন পর্যটকরা বর্ষায় বনের ভেতর ঘুরে বেড়ানোর একমাত্র বাহন নৌকা। ফলে এখানে গড়ে উঠেছে মোট ৩টি নৌকাঘাট। স্থানীয়রা ছোট ছোট নৌকায় পর্যটক বহন করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। করোনাকালে রাতারগুলে পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ থাকায় বিপদে পড়ে যান এসব নৌকাচালক। তবে পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ায় ফের আশায় বুক বাঁধছেন তারা স্থানীয় নৌকাচালক বিল্লাল হোসেন বলেন, পর্যটক আসা বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছি। চেষ্টা করেছি টুকটাক দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করার। কিন্তু তাতে সংসার চলে না। এখন পর্যটন কেন্দ্র খুলে যাওয়ায় আমাদের জানটা বেঁচে যাবে।

আরেক নৌকা চালক ইসমাঈল মিয়াও জানালেন প্রায় একই কথা তিনি বলেন অনেকদিন ধরে আর্থিক কষ্টে আছি। এখন আবার পর্যটক আসবে শুনে স্বপ্ন দেখছি নতুন করে বাঁচার। আশা করি বর্ষার পানি থাকতে থাকতে কিছু আয়-রোজগার করতে পারব জাফলং আর রাতারগুলের মতোই সিলেটের আরেক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর। বিশেষ করে গত ৩/৪ বছরে স্থানটি সারা দেশের পর্যটকদের কাছে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। সিলেট শহর থেকে কাছাকাছি দূরত্বে থাকায় আর যানবাহনের সুবিধার কারণে হাতে অর্ধেক দিন সময় পেলেই ঘুরে আসা যায় এই পর্যটন কেন্দ্র থেকে ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পেশাগত কাজে।

বা মাজার জিয়ারতের উদ্দেশে সিলেটে আসা লোকজন অল্প সময় হাতে পেলেই ছুটে যান এই পর্যটন কেন্দ্রে। এখানকার স্বচ্ছ জলে নিজেকে ভিজিয়ে যেন প্রাণ জুড়ান তারা। সেই সাদাপাথরও বন্ধ করোনার প্রকোপে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এখানকার ব্যবসায়ী এবং নৌকার চালক ও শ্রমিকরা সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রের নৌকাঘাটের ইজারাদার দিলোয়ার মাহমুদ রিপন বলেন, গত এপ্রিল মাসে নৌকাঘাট ইজারা নেওয়ার পরে কিছুদিন ব্যবসা ভালো ছিল কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয় পর্যটন স্পট, বন্ধ হয়ে যায় নৌকাঘাট ফলে প্রায় ২০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে আমার এই ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে উঠব জানি না।

স্থানীয় নৌকাচালক তারেক উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছিলাম। অন্য কোথাও কর্মসংস্থান করতে না পেরে ধার-দেনা করে পরিবার চালিয়েছি আবার খুলেছে পর্যটন আশায় আছি কিছু আয়-রোজগারের সাদাপাথরের রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন মায়া বলেন করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ সময় ব্যবসা বন্ধ।

 

নিউজরুম বিডি২৪।