অনিশ্চয়তার মাঝে মেধাবী ছাত্রী তানিয়ার স্বপ্ন, দায় কার?
মৌলভীবাজারের বড়লেখার নারী শিক্ষা একাডেমি ডিগ্রি কলেজের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান (অনার্স ১ম বর্ষ) বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অটোপাসের ফলাফল সম্প্রতি এসেছে। তবে ফলাফলের তালিকায় নেই মেধাবী শিক্ষার্থী হোসনেয়ারা খানম তানিয়ার নাম। এতে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে পিছিয়ে পড়েছেন ওই মেধাবী শিক্ষার্থী। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তানিয়ার নিবন্ধন না হওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে।
বিষয়টির সমাধান চেয়ে সম্প্রতি বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলীর কাছে লিখিত আবেদন করেছেন ওই শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, মেধাবী শিক্ষার্থী হোসনেয়ারা খানম তানিয়ার বাড়ি বড়লেখা উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর শাহবাজাপুর ইউনিয়নে। দরিদ্র বাবার সংসারে সচ্ছলতা আনতে পড়াশোনার পাশাপাশি একটি বেসরকারি সংস্থার প্রকল্পের মাধ্যমে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করেন তানিয়া।
সেখানে (প্রকল্পের চাকুরিতে) তার নিয়মিত বেতনও হয় না। এরপরও কষ্ট করে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন নিয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে বড়লেখার নারী শিক্ষা একাডেমি ডিগ্রি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি হন। ওই শিক্ষাবর্ষে একই বিষয়ে তানিয়াসহ ৪৫ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি নিশ্চায়ন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তালিকা প্রকাশ করে।
তার নিশ্চায়ন তালিকার রোল নম্বর ৫৩৪৯১৪৬ সহপাঠীদের সাথে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূর থেকে কলেজে গিয়ে যথারীতি ক্লাস করেছেন তিনি। চলতি বছরের মার্চে প্রথমবর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে গেলে তানিয়া জানতে পারেন তিনি ছাড়া সকল (৪৪ জনের) শিক্ষার্থীর নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) কার্ড এসেছে।
ফরম পূরণের শেষ দিন ঘনিয়ে আসলে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে আশ্বাস দেন বিষয়টি সমাধান করে দেবেন। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্ণা দেন তানিয়া, তারা শুধু আশ্বাসই দেন। এরমধ্যে সম্প্রতি তার সহপাঠীদের ফলাফল চলে আসে। কিন্তু তানিয়ার ফল আসেনি। এ অবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম থেকে পিছিয়ে পড়েছেন ওই মেধাবী শিক্ষার্থী।
হোসনেয়ারা খানম তানিয়া অভিযোগ করে বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে ফিস (ফি) দিয়ে অনার্সে ভর্তি হলাম, ক্লাস করলাম। ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় সবার রেজিঃকার্ড (রেজিস্ট্রেশন) আসলেও অদৃশ্য কারণে আমারটা আসেনি।
অন্তত ৩০ বার কলেজের বিভিন্ন জনের কাছে ধর্ণা দিয়েছি। কিন্তু সবাই সমাধানের শুধু আশ্বাসই দিলেন। অবশেষে বললেন আমি কলেজের ছাত্রীই নই। সহপাঠীরা অটোপাস করে এখন দ্বিতীয় বর্ষে। কার ভুলে আমার উচ্চ শিক্ষা অর্জনের স্বপ্নভঙ্গ পড়ালেখা বন্ধের উপক্রম।
নারী শিক্ষা একাডেমি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ একেএম হেলাল উদ্দিন বলেন, এটা পূর্ববর্তী অধ্যক্ষের সময়কালের ঘটনা। কলেজ থেকে ৪৫ জনের তালিকা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু ৪৪ জনের রেজিস্ট্রেশন কার্ড আসে। একজনের আসেনি।
এব্যাপারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার বরাবরে তাৎক্ষণিক চিঠি পাঠানো হলেও রেসপন্স করা হয়নি। ইউএনও মহোদয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় শিক্ষার্থীর অভিভাবককে নিয়ে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশনা দিয়েছেন। কলেজের একজন শিক্ষক প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীর অভিভাবককে শীঘ্রই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হবে।
লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, ‘শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন না হওয়া ও ফলাফল না আসার কারণ জানতে চেয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে চিঠি দেওয়া হয়।
পাশাপাশি একজন শিক্ষক প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীর অভিভাবককে সাথে নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করে বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাতে শিক্ষার্থীর শিক্ষাবর্ষ নষ্ট না হয়। এতে শিক্ষার্থীকে কোনো ধরণের অতিরিক্ত ব্যয় যেন বহন করতে না হয় সেই বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে বলা হয়েছে।
নিউজরুম বিডি২৪।