হার না মানা এক ফেরিওয়ালার গল্প। – Newsroom bd24.
ঢাকামঙ্গলবার , ৩ আগস্ট ২০২১

হার না মানা এক ফেরিওয়ালার গল্প।

লিটন পাঠান, সিলেট প্রতিনিধি ।
আগস্ট ৩, ২০২১ ৩:৩৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

 

 

কঠোর লকডাউনেও হার না মানা এক ফেরিওয়ালার গল্প।

 

 

লিটন পাঠান _  গিয়েছিলাম সেদিন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মৌজপুর গ্রামে ‘করোনার বাজার’ দেখতে, করোনার বাজার নামের কারণেই মূলত যাওয়া।

 

পরে সেখানকার এক লোকের মুখে জানতে পারলাম, গতবছর লকডাউনের কারণে স্হানীয়ভাবে একটি বাজার স্হাপন করেছে লোকজন। যাতে তারা স্বাস্হবিধি মেনে গ্রামেই বাজার করতে পারেন।

 

যেহেতু করোনার সময় বাজারের সৃষ্টি, তাই বাজারের নাম ‘করোনার বাজার’। লোকজনের সঙ্গে কথা বলতেই হঠাৎ লক্ষ্য করলাম, বাজারের একটু সামনেই একজন বয়স্ক লোক ‘এই চুড়ি, ফিতা, লেইস’ বলে হাক দিচ্ছেন। কাঁধে ছিল ভার। একপাশে কাচের বাক্স আরেক পাশে বড় বাজারের ব্যাগ। তার সামনে হরেকরকম সাজ-সজ্জার জিনিস আধা-পাকা চুল দেখে মনে হয় বয়স আনুমানিক ৫০ এর কাছাকাছি।

 

তার হাক শুনে কাছে ছুটে এল এক কিশোরী। দৃশ্যটি দেখেই ফিরে গেলাম অতীতে এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো আমি ফিরে গেছি আমার হারানো শৈশবে। মায়ের মুখে শুনেছিলাম, আমি না-কি এরকম এক ফেরিওয়ালার পেছনে পেছনে চলে গিয়েছিলাম অন্য গ্রামে।

 

পরে অনেক খোঁজাখুঁজি সন্ধান পেয়েছিলেন। এসব কথা ভাবতে ভাবতে অতীত থেকে বর্তমানে ফিরি। মেয়েটি ফেরিওয়ালার কাছে নূপুর দেখতে চাচ্ছে।

 

দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করার লোভ সামলাতে পারলাম না। কাছে গিয়ে লোকটির মুখ থেকে জানতে পারলাম তার নাম শহিদ মিয়া। গ্রামের বাড়ি বাড়াচান্দুরা গ্রামে। স্ত্রী আর তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়েই তার সংসার। ভিটা ছাড়া কিছুই নেই কিশোর বয়সেই এ পেশা বেছে নেন সেই থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে বেড়ান। ঘুরতে ঘুরতে রাত কাটান গ্রামের কোনো স্কুল-কলেজে। গত রাতে তিনি ছিলেন হালুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায়।

 

সেখানেই কিছু খাবার খেয়ে তার রাত কাটে। এভাবেই দিন কাটে। এক দিনে হাজার-বারোশ টাকা বিক্রি করেন। তা থেকে লাভ হয় তিন থেকে চারশত টাকার মতো। বাড়ি ছেড়ে এরকম ঘুরতে ঘুরতে দুই-তিন মাস পর দেখা হয় স্ত্রী-মেয়েদের সাথে।

 

শহিদ মিয়া ও আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছে সেই কিশোরী। এবার কিশোরীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম তোমার নাম কী’ কিশোরী উত্তর দিলো, ‘আমার নাম রুবিনা। এরপর জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তুমি কোন ক্লাসে পড় ?

 

আমি আমার পাশের এলাকা মাধবপুর প্রেমদাময়ী বালিকা উ”চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণিতে পড়ি তাদের সঙ্গে কথা বলে চলে এলাম করোনার বাজারে।

 

করোনার বাজার ঘুরে ফিরে এলাম গন্তব্যে বাসায় ,  এসে হঠাৎ মনে পড়লো সেই কিশোরী ও ফেরিওয়ালার কথা।

 

মনে মনে ভাবতে লাগলাম, শহিদ মিয়ার কাছ থেকে কিশোরীটি নূপুর নিয়েছিল কি-না? আবার মনে হলো, যদিও নিয়েও থাকে। তাহলে কি দাম চুকিয়েছিল? না-কি শহিদ মিয়া বলেছিল, ‘না মা, আজ তোমার কাছ থেকে নূপুরের দাম নেব না।’ আরও জানতে ই”ছা করছে, শহিদ মিয়া কি কিশোরীর মধ্যে তার মেয়ের প্রতি”ছবি দেখতে পেয়েছিলেন?

 

কিশোরীকে দেখে তার মেয়ের স্মৃতি মনে করে চোখ মুছতে মুছতে সেখান থেকে চলে গেলেন কি-না ইচ্ছাকরলেই তো আর জানতে পারবো না।

কারণ শহিদ মিয়া তো আর এক জায়গায় থাকার লোক নন তিনি ঘুরে ঘুরে ফেরি করেন গ্রাম থেকে গ্রামে।

 

এ ব্যাপারে আন্দিউড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ হেলাল সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান করোনাকালীন সময়ে এক স্হান থেকে অন্য স্হানে গমন করে বা গ্রামে গ্রামে গিয়ে কোন জিনিস বিক্রি করা ঠিক নয়।

শহিদ মিয়ার জন্য রিলিফ কার্ডের ব্যবস্হা করা হবে যাতে ১০ টাকা কেজি করে প্রতি মাসে মাসে ভিজিএফ এর সুবিধা ভোগ করতে পারে।

 

নিউজরুম বিডি২৪।