অক্সিজেন সঙ্কটে সিলেট, শয্যা খালি নেই হাসপাতালগুলোতে। – Newsroom bd24.
ঢাকামঙ্গলবার , ৩ আগস্ট ২০২১

অক্সিজেন সঙ্কটে সিলেট, শয্যা খালি নেই হাসপাতালগুলোতে।

লিটন পাঠান, সিলেট প্রতিনিধি
আগস্ট ৩, ২০২১ ১২:১৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

 

 

  • অক্সিজেন সঙ্কটে সিলেটের হাসপাতালগুলো, ধারণ ক্ষমতার বেশী রোগী  বিভিন্ন হাসপাতালে, নতুন রোগী ভর্তি বন্ধ।

 

সিলেটে দিন দিন অবনতি ঘটছে করোনা পরিস্থিতির। প্রতিদিনই  আক্রান্তের রেকর্ড হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে করোনা রোগীদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসা সংশিষ্টরা।

 

নগরীর সরকারী বেসরকারী সকল হাসপাতালের করোনা ইউনিট রোগীতে পূর্ণ। কোন কোন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ধারণ ক্ষমতার চাইতেও বেশী সর্বত্র হাহাকারের মধ্যে কিছু হাসপাতাল বাধ্য হয়ে নতুন করোনা রোগী ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া কিছু হাসপাতাল বেড খালি থাকলেও অক্সিজেন সংকটের কারণে নতুন করোনা রোগী  ভর্তি বন্ধ রাখা  হয়েছে বলে জানান  হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা ।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় নগরীতে সরকারী বেসরকারী মিলে ১২টি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা চলছে। হাসপাতালগুলোতে ১২৮ টি আইসিইউ ও প্রায় ৭ শতাধিক আইসোলেশন শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে সকল আইসিইউ ও সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি রয়েছে আইসিইউ এবং সাধারণ শয্যার জন্য রোগীর স্বজনরা ছুটাছুটি করছেন।

 

এক হাসপাতাল থেকে অপর হাসপাতালে শয্যা, আইসিইউ কিংবা অক্সিজেনের জন্য কেউ কেউ অ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যুবরণ করছেন ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক উদ্যোগে সিলেটে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করোনা রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে সহযোগিতা করে আসছিলো রোগীর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় সবারই স্টকে থাকা অক্সিজেন সিলিন্ডার ফুরিয়ে গেছে। ফলে অনেকে যোগযোগ করলেও দিতে পারছেন না অক্সিজেন সাপোর্ট এমন অবস্থা গোটা সিলেটজুড়েই।

 

সিলেট প্রাইভেট হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও নুরজাহান হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. নাসিম আহমদ বলেন, একেই তো ধারণ ক্ষমতার চাইতে বেশী রোগী তার উপর আবার অক্সিজেন সঙ্কট আমার হাসপাতালে সীট খালি থাকার পরও নতুন রোগী ভর্তি নিতে পারছিনা অক্সিজেনের সংকটের কারণে।

 

অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে, স্পেকট্রা ও ইসলাম পূর্বের মতো অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারছেনা। যেখানে প্রতিদিন অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ছেই। এই অবস্থা চলতে থাকলে সীট খালি থাকলেও রোগী ভর্তি করতে পারবেনা। অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবী জানান তারা।

 

সিলেটের করোনা ডেটিকেটেড হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আরএমও ডা: সৈয়দ নাফি মাহদী জানান, শামসুদ্দিন হাসপাতালে বর্তমানে আইসিইউ ও সাধারণ শয্যা মিলে ১০২ জন রোগী ভর্তি আছেন। রোববার নতুন ৬ জন রোগী ছাড়পত্র পায়। এর স্থলে ৭ জন নতুন রোগী ভর্তি হন। এর বিপরীতে যোগাযোগ করেন অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন। শয্যা না থাকায় এসব রোগী ভর্তি করা সম্ভব হয়নি।

 

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক (অর্থ) প্রফেসর ডা: মাহবুবুল আলম জানান, ওসমানী হাসপাতালে ৩টি ওয়ার্ডে ২৫৭ জন করোনা রোগী রয়েছেন। আমাদের এখানে ১০টি আইসিইউ সহ প্রায় ৩০০ জন করোনা রোগী ভর্তির ব্যবস্থা রয়েছে। তবে অক্সিজেন সাপোর্টের কারণে চাইলেও বেশী রোগ ভর্তি করা সম্ভব নয়। কারণ ওয়ার্ডে ভর্তি অধিকাংশ রোগীর অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন হচ্ছে।

 

সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা: হিমাংশু শেখর দাস বলেন, ৭টি এসডিও সহ আমাদের এখানে ১৬টি করোনা আইসিইউ রয়েছে। যার একটিও খালি নাই। এছাড়া ওয়ার্ড কেবিন মিলে সাধারণ শয্যার ৮০ টিতেও রোগী ভর্তি রয়েছে। রোগীর চাপে আমরা রোববার আরো ৪টি আইসোলেশন বেড বৃদ্ধি করেছি। ৩/৪ দিনের মধ্যে আরো ১০টা এসডিও (আইসিইউ) চালুর প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। রোববার ১২ জন করোনা রোগী ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় চলে যান। ফলে নতুন আরো ১২ জন ভর্তি হয়। এরপর কমপক্ষে ২০/৩০ জন রোগী ভর্তির জন্য যোগাযোগ করলে আমরা ভর্তি নিতে পারিনি।

 

নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক ডা: নাজমুল ইসলাম জানান, আইসিইউ ও সাধারণ শয্যা মিলে ৯৫ জনের মতো করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর বাইরে আমাদের আর সীট নাই। ফলে নতুন রোগী ভর্তি নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। তবে সুস্থতা ও মৃত্যুজনিত কারণে আইসিইউ কিংবা সাধারণ বেড খালি হলে এক বেডের বিপরীতে কয়েকজন ভর্তির সিরিয়ালে থাকেন।

 

রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা: তারেক আজাদ বলেন, আমাদের হাসপাতালে ১৪টি আইসিইউ রোগীতে পূর্ণ। এছাড়া ১৯২ জন রোগী উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন। এরমধ্যে ৪০ জনের করোনা পজিটিভ। বাকীদের স্যাম্পল নেয়া হয়েছে রিপোর্ট আসলে ফলাফল জানা যাবে। অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। এর বেশী রোগী ভর্তি নিলে অক্সিজেন সংকটের আশঙ্কা থেকে যায়। তবুও এখানে রোগী ভর্তি অব্যাহত রয়েছে।

 

খাদিমপাড়া ৩১ শয্যা বিশিষ্ট করোনা ডেটিকেটেড হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: জালাল উদ্দিন জানান, আমার এখানে রোববার রাত পর্যন্ত ২৪ জন ভর্তি আছেন। এরমধ্যে ১৫ জনের পজিটিভ ও ৯জন উপসর্গ আছে। এদের মধ্যে থেকে ৫ জনকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হচ্ছে।

 

দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা: মাঈনুল ইসলাম বলেন, আমার এখানে ৩১ বেডের বিপরীতে ২৮ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ২৪ জনকে দিতে হচ্ছে অক্সিজেন। আজ রোববার রোগীর চাপ একটু কম থাকলেও শনিবার প্রচুর চাপ ছিল। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশী রোগী ভর্তি ছিল এখানে।

 

নগরীর কয়েকটি বেসরকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপকালে জানা যায়, কিছু হাসপাতালে শয্যা সংকটের কারণে রোগী ভর্তি করা যাচ্ছেনা। আবার কিছু হাসপাতালে শয্যা আছে কিন্তু অক্সিজেন সঙ্কটের কারণে নতুন রোগী ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছেনা। সরকারী হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোগে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নর্থ ইষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল, নুরজাহান হাসপাতাল, আল হারামাইন হাসপাতাল ও ওয়েসিস হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

 

 

  • নিউজরুম বিডি২৪

 

 

   
%d bloggers like this: