মতলব দক্ষিণে কাঠের নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগড়রা।
বর্ষার আগমনে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে খাল বিল নদী নালায় হু হু করে বাড়ছে পানি। তাই বর্ষা মৌসুমে নৌকা তৈরিতে কারিগরদের সময় কাটছে মহাব্যস্ততায়।
পানি একটু বেশি হলেই আরো কদর বেড়ে যায় এই নৌকার। তাইতো বসে নেই স্থানীয় নৌকা তৈরির কারিগররা। চলছে নৌকা তৈরীর ধুম।
বর্ষায় প্লাবিত এই এলাকায় মানুষের যোগাযোগের একমাত্র বাহন হলো নৌকা।
এলাকার লোকজন বন্যার সময় যাতায়াত কিংবা মালপত্র বহনের জন্য নৌকা ব্যবহার করে থাকেন। তাই প্রতিবারের মতো এবারো বন্যার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলের লোকজন নৌকা ও লগি-বৈঠা তৈরির কাজে মনোযোগ দিয়েছেন।
সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে নৌকা তৈরির কারিগররা নৌকা বিক্রিও করছে অনেক।
স্থানীয় এলাকার বাইশপুর, চরমুকুন্দী, কদমতলী, উদ্দমদী, বরদিয়া, রূপসীপল্লী গ্রাম ও নারায়নপুর ইউনিয়নে প্রতি বছরের ন্যায় বর্ষা মৌসুমে নৌকা তৈরির গুরুত্ব বহু গুণে বেড়ে যায়।
অনেকেই বর্ষা মৌসুমে ছোট ছোট নৌকা তৈরি করে মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করে থাকেন।
উপজেলার রূপসীপল্লী গ্রামের মোঃ আফাজ উদ্দিনের ছেলে মোঃ খোকন সরকার নিউজ বিডি২৪ কে জানান,আমি পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রী। আমি প্রতিবন্ধী মানুষ।
নিজেই একা কাজ করি। আমি কাঠের নৌকা ও বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরীর মাধ্যমে বহুদিন ধরে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা দুই মেয়ে এক ছেলে সহ মোট ছয় জন।
এই উপার্জনের অর্থ দিয়ে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছোট মেয়ে সপ্তম শ্রেনি ও ছেলেকে কলেজে পাড়াচ্ছি। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে আমি নৌকা তৈরির কাজ করে থাকি।
আমি চাম্বুল, কড়ই ও বাবলা গাছের কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরী করে থাকি। গত বিশ দিন ধরে আমার নৌকা বানানো চলছে। একটি নৌকা তৈরীতে কমপক্ষে তিন দিন সময় লাগে।
প্রতিটি নৌকা তৈরিতে তিন থেকে ৪হাজার টাকার কাঠ লাগে। এ বছরে এ পর্যন্ত ৬টি নৌকা বিক্রি করতে পেরেছি। আমি ১২-১৫ ফুট লম্বা নৌকা তৈরি করে থাকি। হাতে এখন আরো ৫টি নৌকার অগ্রিম অর্ডার রয়েছে।
নৌকার আকার অনুযায়ী মুজরীসহ ৪হাজার ৫শ থেকে ৬হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকি।
আমার এই নৌকা তৈরীর কাজ আগামী কার্তিক মাস পর্যন্ত চলবে। বর্ষা মৌসুমে জেলেদের চাহিদা পূরণে নিজেকে সর্বদা সচল রাখার চেষ্টা করি। এই নিয়েই আমি আমার সংসার জীবন চালিয়ে যাচ্ছি।
নৌকা তৈরিতে কাঠ ছাড়াও মাটিয়া তৈল,আলকাতরা, তারকাঁটা,গজাল, পাতাম ইত্যাদি জিনিস লাগে,যা নৌকাকে দীর্ঘদিন টেকসই রাখে।
বর্ষা এলেই নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করে স্থানীয় মিস্ত্রিরা। এক সময় গ্রামগঞ্জে পণ্য পরিবহণ ও যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা।
বিশেষ করে যে সমস্ত এলাকায় বন্যার পানি বেশি দিন ধরে আটকে থাকে সে সব এলাকায় নৌকার গুরুত্ব ও চাহিদা অনেক বেশি থাকে।
মিস্ত্রী খোকন সরকার বলেন, বর্তমানে লোহা ও কাঠের দাম বাড়ছে নৌকা বানাইতে খরচও বাইরা গেছে। ১ টা নৌকা বানাইতে এক থেকে দেড় হাজার টাকা মজুরি পাই।
যা আগের তুলনায় অনেক কম। আমাগো কাজ ৩/৪ মাস বর্ষা শেষ হইলে চাহিদা শেষ। করোনার কারনে নৌকার অর্ডার ও কম পাইছি।
তাই এই শিল্প কে বাঁচাতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন, এই শিল্পের কারিগরিরা।
নিউজরুম বিডি২৪।