যেখানে আকাশ আর্ত কান্নায় ভারী_কাজী সালাহউদ্দীন। – Newsroom bd24.
ঢাকাশনিবার , ২৪ জুলাই ২০২১

যেখানে আকাশ আর্ত কান্নায় ভারী_কাজী সালাহউদ্দীন।

উপসম্পাদকীয়।
জুলাই ২৪, ২০২১ ১:১৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

 

যেখানে আকাশ আর্ত কান্নায় ভারী।

_ কাজী সালাহউদ্দীন।

 

মুসলিম -বিশ্ব যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করল পবিত্র ঈদুল আযহা। ঈদের এই দিনটি ছিল ত্যাগ ও মহান আল্লাহর প্রতি প্রেমের বিরল দৃষ্টান্ত সমুজ্জ্বল।

বর্তমান করোনাকালীন -বিশ্বের মুসলমানরা মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছে করোনামুক্ত শান্তি ফিরে আসুক -হানাহানিমুক্ত বিশ্ব গড়ে উঠুক।
সারা বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হোক। কিন্তু দুর্ভাগ্য, বিশ্ববাসীর মুনাজাত এবং মানুষের প্রত্যাশা কি কখনো পূরণ হবে?
যেখানে প্রতিনিয়ত কফিনের মিছিল আর আর্ত কান্নায় ভারি উড়ছে আকাশ -বাতাস। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ি। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে বাঁচাও বাঁচাও আরতো কান্নার স্বরধ্বনি। বাবার হাতে মাথা মস্তকবিহীন সন্তানের লাশ। আফগানিস্থানে পবিত্র ঈদের জামাতে রকেট হামলা। যার দায় কেউ স্বীকার করছে না। অথচ পবিত্র ঈদ-উল-আযহার সাথে যার নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয় সেই ইব্রাহিম (আঃ)মুসলমানদের পাশাপাশি খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের কাছেও পরম শ্রদ্ধার পাত্র।

 

 

ভেবে অবাক হই -ইসরায়েলিরা একের পর এক ধ্বংস করে দেয় মসজিদ এরপর মসজিদ। মসজিদকে পরিণত করে মদের দোকান, হোটেল জাদুঘর আর সিনেমা হলে। জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলীয় সাফেদ শহরের আল আহমার মসজিদকে কনসার্ট হল রূপান্তরিত করা হয়েছে। মুসলমানদের প্রথম কেবলা আল-আকসা মসজিদকে কেন্দ্র করে কত মুসলমানের পবিত্র প্রাণ রক্তে রঞ্জিত। অথচ জেরুজালেমে অবস্থিত আল-আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাস সংলগ্ন চত্বরে অসংখ্য নবী রাসুলের সমাধি বিদ্যমান। এ মসজিদ নির্মাণের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় -ইসলাম ধর্মের নবী হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কর্তিৃক পবিত্র কাবা ঘর নির্মাণের ৪০বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর তার নাতি বনি ইসরাইলের প্রথম নবী হযরত ইয়াকুব (আঃ)জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ নির্মাণ করেন।

ধর্মীয় বিশ্বাস মতে পরবর্তীতে হযরত সুলাইমান (আঃ)জিন জাতির মাধ্যমে পবিত্র মসজিদ পুনর্নির্মাণ করেন। ইসলামের প্রাথমিক যুগে এ মসজিদটি মুসলমানদের কেবলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অনেক বছর মসজিদটি মুসলমানদের দখলে থাকার পর ১০৯৯সালে ক্রুসেড রা জেরুজালেম দখল করার পর মসজিদটি একটি প্রাসাদ এবং একই প্রাঙ্গণে অবস্থিত কুব্বাত আস সাখরা কে গির্জা হিসেবে ব্যবহার করতো। সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী জেরুজালেম জয় করার পর মসজিদ হিসেবে এর ব্যবহার পুনরায় শুরু হয়। এরকম অসংখ্য ঐতিহাসিক মসজিদের বর্ণনা দেয়া যেতে পারে-যেমন হাইফা কাবাবীর দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, জেরুজালেমে অবস্থিত ওমর মসজিদ, সমুদ্রের পাশে দৃষ্টিনন্দন আল বাহার মসজিদ ইত্যাদি।

 

 

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্রের সূচনা ঘটে। তখনই আমূল পাল্টে যায় ফিলিস্তিনিদের জীবন। ওই বছর ১৪ই মে বিশ্ব ইহুদি সংগঠনের প্রধান ডেবিট বেন গুরিয়ন ফিলিস্তিনিদের ভূমিতে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন । দিনটিকে ইসরায়েলিরা স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। আর ফিলিস্তিনিরা ” নাকবা ” বা ” মহা বিপর্যয় “হিসেবে পালন করে। শুরু হয় নৃশংসতা।ইসরাইল রাষ্ট্র ঘোষণার পরই ফিলিস্তিনিদের তাড়াতে অত্যাচার আরো বাড়িয়ে দেয়। আর এতে সমর্থন দেয় ব্রিটেনসহ পশ্চিমারা।

ওই সময় ফিলিস্তিনির অর্ধেক বাসিন্দা জীবন বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।তাদের সাথে ফিলিস্তিনের অন্যান্য অঞ্চলের বাসিন্দাদের মত টাইবেরিয়াস এর বাসিন্দারাও সিরিয়া, লেবাননে আশ্রয় নেয়। ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করে তাদের ঘরবাড়ি, সহায় সম্পত্তি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় ইহুদি দখলদাররা।

অথচ সপ্তম শতাব্দী থেকে উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত সুদীর্ঘ ১২০০বছর একটি মুসলিম জাতি রাস্ট্র হিসেবে বিশ্বে পরিচিত ছিল ফিলিস্তিন। সেখানে মুসলিমদের পাশাপাশি খ্রিষ্টান ও স্বল্প সংখ্যক ইহুদি ও বাস করত। ১৯১৭সাল থেকে ১৯৪৮সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ কর্তৃক ফিলিস্তিন শোষিত হয়। ব্রিটিশরা ফিলিস্তিনিদেরকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দেয়ার মিথ্যা আশ্বাস ও দিয়েছিল।

মিথ্যা আশ্বাস আর সত্যে পরিণত হয়নি। চলমান যুদ্ধের ভেতর ইহুদি বিজ্ঞানী ডক্টর হেইস বেইজম্যান তৈরি করেন এক দুর্লভ বোমা। যা যুদ্ধজয় এ ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেলকোর ফিলিস্তিনীকে ইহুদির হাতে তুলে দেয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে। শুরু হয় ইহুদি বসতি স্থাপনের কার্যক্রম। ১৯২২সালে ইউরোপ -আমেরিকা থেকে জাহাজ ভর্তি ইহুদিরা ফিলিস্তিনি আসতে থাকে।

ইহুদিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০হাজারে উন্নীত হয়। আর ১৯৪৮সালে এ সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৬লাখে। ইহুদীরা ব্রিটিশদের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত শক্তিশালী সন্ত্রাসী সংগঠন গড়ে তোলে। দিনে দিনে বেড়ে চলে তাদের নিষ্ঠুরতা। একটি দিনের জন্যও শান্তিতে ঘুমাতে পারেনি ফিলিস্তিনিরা। একেতো তারা নিরস্ত্র -সেই সাথে নিরীহ। জবরদখল আর নৃশংসতায় ফিলিস্তিন এখন পরিণত এক ভয়ঙ্কর মৃত্যুকূপে। গত রমজান মাসেও প্রচন্ড বেড়ে গিয়েছিল তাদের নৃশংসতা। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের নিন্দার ঝরে তাদের কিছুই যায় আসে না।

বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জাতিসংঘ। অথচ সেই জাতিসংঘের কোন ভূমিকা নেই, নিরীহ মানুষের হত্যাযজ্ঞ নিরসনে কোনো কার্যক্রম নেই –এ লজ্জা সমগ্র বিশ্ববাসীর! এর দায় অবশ্যই সবাইকে নিতে হবে।

 

 

বিশ্ব বিবেক আজ কোথায়?

এক সময় উপমহাদেশের মানুষ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের শিকার হয়েছিল। আজ ফিলিস্তিন বাসীরা ও সেই একই অবস্থায়। অন্যদিকে মানুষ দাবি করছে তারা সভ্য হয়েছে–যেখানে মহাকাশে মানুষ অনায়াসে যাতায়াত শুরু করেছে, ঘর নির্মাণের চিন্তাভাবনা করছে অথচ সেই মানুষ ই নৃশংস আর রক্তলোলুপ অসভ্যতার চরম বহিঃপ্রকাশ প্রতিনিয়ত ঘটিয়ে যাচ্ছে। হায় মানুষ! হায় সভ্যতা!

আজ ফিলিস্তিন নিপীড়িত অত্যাচারিত একটি দেশের নাম। যেখানে ঘুম ভাঙ্গে গোলাবারুদ, কামানের বিকট শব্দে। এখানে মসজিদে নামাজে ইমামতি করেছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)মহান আল্লাহ তাআলার দিদার লাভ করার জন্য তিনি বোরাকে চড়ে যখন পবিত্র মেরাজ গিয়েছিলেন, তখন এই মসজিদে তিনি তার যাত্রা বিরতি করেছিলেন। সেই পবিত্র ভূমি আজ কুলষিত।

ইসরাইলি দুর্বৃত্তদের কবলে। বিশিষ্ট কবি আল মুজাহিদীর পবিত্র প্যালেস্টাইন কবিতাটি প্রাসঙ্গিকভাবে স্মরণযোগ্য।

‘প্রিয় সুপ্রাচীন পিতৃভূমি! তোমার স্বর্গীয় ছায়াবীথি সুখময় হোক। স জীবন্ত বৃক্ষরাজি, সদ্যজাত শিশুগণ, নারীও রমণীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস পুত্রে ও জেগে থাক,
আল্লাহর আরশ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ুক ক্ষুদ্র, ছোট আবাবিল পাখি গুলি ঝাকে ঝাকে,ঠোঁটে ঠোঁটে পাথরের করা তুলে দিয়ে দিক হাক
গাজা ও হেব্রণের উপত্যকায়
জেরুজালেমের শীর্ষ চূড়া থেকে ছুঁড়ে দিক
বজ্রবারুদের স্ফুলিঙ্গের চূর্ণ গুলি।
নাস্তানাবুদ করে দিক দুশমনদের ব্যূহ ঘাঁটি গুলি।
জামানার প্রেত বাহিনীর জল্লাদের উপর নামক কিয়ামত।

আবার কবি ফারুক নেওয়াজ তার ‘ নিপাত যাক জায়নাবাদ ‘কবিতায় দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন ঃ

নিপাত যাক জায়নাবাদ
দে মিটিয়ে হায়না স্বাদ
নিপাত যাক তেল হাবিব…..
বন্য শূকর ঘৃণ্য জীব….
নিপাত যাক জঙ্গীরা
ইসরায়েলের সন্দিরা
আসবে ঠিকই, আসছে দিন
মুক্ত -স্বাধীন ফিলিস্তিন।

বাংলাদেশের জন্মমুহূর্তের পূর্বে ও একই সমস্যায় আধিপত্যবাদের শিকার হয়েছিল। সেখানেও প্রতিনিয়ত রক্ত ক্ষয় আর যুদ্ধ। সে মুহূর্তে আমরা বলতাম আমাদের যুদ্ধ কি ভিয়েতনামের মতো চলতে থাকবে? আমরা কি স্বাধীন বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনামের স্বাধীনতা দেখে যেতে পারব না?

আজ গর্বিত, পৃথিবীতে দুটো দেশ ই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে -স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে।
হয়তো ফিলিস্তিনি তো তাই হবে, সেদিন আমরা কেউ বেঁচে থাকব – হয়তো থাকবো না। তবে আজ পর্যন্ত কোন রক্ত বৃথা যেতে দেখি নি।

কোন সংগ্রাম ই আজ পর্যন্ত বিফল হয়েছে এমনটি জানা নেই। বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় দেশ। আমরা শান্তির আহ্বান জানাই। পবিত্র ঈদুল আজহার এই ত্যাগ ময় দিনে আহ্বান জানাই পৃথিবীতে শান্তি নেমে আসুক। জয় হোক মানবতার। জয় হোক সভ্যতার। সুখী হোক পৃথিবীর সকল মানুষ। আমরা আর্ত কান্নায় ভরা আকাশ দেখতে চাই না। আর যুদ্ধ নয়, চাই শান্তি।

 

 বিশিষ্ট কবি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজী সালাহউদ্দীন।

 

 

নিউজরুম বিডি২৪।