শয্যা খালি নেই, ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে রোগী।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে উঠে এসেছে করোনার ভয়াবহ চিত্র। শয্যা খালি না থাকায় বেশিরভাগ রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে হাসপাতাল থেকে।
চট্টগ্রামের সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলো মিলে গতকাল পর্যন্ত ১ হাজার ২৬৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন বলে জানানো হয় সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে। পাশাপাশি আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন ১০৯ জন রোগী।
চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।সরকারিভাবে কিছু শয্যা ফাঁকা দেখানো হলেও ওই সব হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগী ব্যবস্থাপনার জন্য, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম, হাই ফ্লো নাজাল ক্যানলা এবং নিবিড় পরিচর্যার কেন্দ্রের (আইসিইউ) মতো ব্যবস্থাগুলো নেই।
ফলে হাসপাতালের শয্যার জন্য স্বজনেরা এই হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে ছুটছেন।কিন্তু রোগীকে ভর্তি করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
নগরের ম্যাক্স হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য ৬০টি সিটের ব্যবস্থা রয়েছে যার মধ্যে রোগী ভর্তি আছেন প্রায় ৭০ জন। হাসপাতালটির মহাব্যবস্থাপক রঞ্জন দাশগুপ্ত হতাশ হয়ে বলেন, হাসপাতালে কোন আসন খালি নেই। কোন কোন কেবিনে একজনের কেবিনে দুইজন করে রোগী ভর্তি আছেন একই পরিবারের। আইসিওতে ও কোন আসন খালি। নেই। এ অবস্থায় আমরা নিরুপায়। নতুন রোগী ভর্তি করা অসম্ভব।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দৈনিক প্রতিবেদনে আইসিইউতে ১০ এবং সাধারণ শয্যায় ৩০ শতাংশ আসন ফাঁকা দাবি করা হয়। কিন্তু বাস্তবে এর চিত্র একদম বিপরীত।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত নগরীর হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৭০ জন রোগী ভর্তির সক্ষমতা থাকলেও সেখানে অক্সিজেনসহ জরুরী সুযোগ সুবিধা গুলো অপ্রতুল। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডের ১৫০ টি সিটের সবগুলোতেই রোগী ভর্তি রয়েছেন। সেখানে রোগী ভর্তি হতে না পারলে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের কোভিড ইউনিটও সম্পূর্ণ রোগীতে পূর্ণ।
সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, হাসপাতালের ওয়ার্ড গুলো পরিপূর্ণ হয়ে গেলে দরকার হলে হাসপাতালের মেঝেতে রোগী রাখার ব্যবস্থা করা হবে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শয্যা সংখ্যা আরো ১০০ টি বাড়িয়ে ৪০০ করা হয়েছে। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি। কিন্তু মানুষ যদি এখনও সচেতন না হন স্বাস্থ্যবিধি না মানেন, সামনে ভয়াবহ সময়ের জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত নই।
নগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে দেখা যাচ্ছে একই চিত্র বিন্দুমাত্র রোগী রাখার কোন ঠাঁই নেই।পার্কভিউ হাসপাতালে আইসিইউসহ ৯০ জনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক তালুকদার জিয়াউর রহমান বলেন, অনেক অনুরোধ আসছে কিন্তু শয্যা খালি না থাকায় আমরা রোগী ভর্তি করতে পারছিনা। রোগীদের ফোন নাম্বার রেখে তাদের বিদায় দিতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। আসন খালি না হলে নতুন রোগী ভর্তি করা কোনভাবেই আমাদের পক্ষে সম্ভব না।
নগরের মা ও শিশু হাসপাতালে ২৭টি আইসিইউ এবং এইচডিইউসহ প্রায় ২০০ করোনা রোগী ভর্তি আছেন। এরপরও চাপ সামলানো যাচ্ছে না। হাসপাতালের অধ্যাপক অলক নন্দী বলেন, ‘করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কোনো শয্যা ফাঁকা নেই। আইসিইউ, এইচডিইউ সবজায়গায় রোগী ভর্তি। রোগীর চাপ যেভাবে বেড়েছে, তাতে সামনের দিনগুলো ভয়াবহ হতে যাচ্ছে ।’
নিউজরুম বিডি২৪