স্বাস্থ্য বিধি মেনে  জগন্নাথ দেবের উল্টোরথ যাত্রা সম্পন্ন। – Newsroom bd24.
ঢাকামঙ্গলবার , ২০ জুলাই ২০২১

স্বাস্থ্য বিধি মেনে  জগন্নাথ দেবের উল্টোরথ যাত্রা সম্পন্ন।

চয়ন ঘোষ, (চাঁদপুর প্রতিনিধি)
জুলাই ২০, ২০২১ ৮:১২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

 

মতলব দক্ষিণে  স্বাস্থ্য বিধি মেনে  জগন্নাথ দেবের উল্টোরথ যাত্রা সম্পন্ন।

 

চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণে ঐতিহ্যবাহী মতলব শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের মন্দিরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ অনুসরণ করে স্বল্প পরিসরে স্বয়ং ভগবান জগন্নাথ দেবের উল্টো রথযাত্রা সম্পন্ন হয়েছে।

আজ ২০ জুলাই, ৫ শ্রাবণ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ , রোজ মঙ্গলবার বিকেল ৫ টায় মতলব জগন্নাথ দেবের মন্দিরে স্বল্প সংখ্যক ভক্তবৃন্দের উপস্থিতিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও মন্দির কমিটির সকল সদস্যদের সহযোগিতায় এ উল্টোরথ যাত্রা সম্পন্ন হয়েছে।

জানা যায় যে, সকাল ৭টা থেকে থেকে মন্দিরে আগত নারী পুরুষ ভক্তবৃন্দরা সরকারি স্বাস্থ্য বিধি অনুসরন পূর্বক ও শারিরীক দুরত্ব বজায় রেখে জগন্নাথ দেবকে প্রনামের সহিত মূর্তি দর্শন করেন।

রথের দিনটিকে সবচেয়ে শুভ দিন হিসেবে মনে করেন হিন্দুরা। রথযাত্রার ঠিক ৮দিনের মাথায় গুন্ডিচা মন্দির থেকে স্বয়ং জগন্নাথ দেব যাত্রা করেন নিজ ধাম শ্রীক্ষেত্র পুরীর মন্দিরের উদ্দেশ্যে। এই দিনটিকে বাঙ্গালিরা বলেন উল্টোরথ যাত্রা। কথিত আছে যে, রথের দিন মাসির বাড়ি থেকে স্বয়ং ভগবান জগন্নাথ দেব তার নিজ ধাম শ্রীক্ষেত্র পুরীতে ফিরে আসেন।

উল্টো রথযাত্রা বা ফেরা রথযাত্রার মাহাত্ম- জগন্নাথদেব, বলরাম, সুদর্শনচক্র ও সুভদ্রা নয় দিন গুন্ডিচা মন্দিরে দেবীর সেবা গ্রহণ করার পর পুনরায় শ্রীক্ষেতের নীলাচলে নিজের ধামমন্দিরের উদ্দেশ্যে রথেযাত্রা লীলা করেন।গুন্ডিচাদেবী তিনি ছিলেন বৃন্দাবনের বৃন্দাদূতী। তার আকুল প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে ভগবান কথা দিয়েছিলেন- কলিকালে আমি তোমার কুঞ্জবিহারে একটানা নয় দিন অবস্থান করবো। দ্বাপর যুগে এই গুন্ডিচা দেবী ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের দীক্ষাগুরুদেব আচার্য্য সান্দিপনী মুনীর কন্যা।

সান্দিপনী মুনীর পুত্রকে দৈত্য শঙ্খাসুর পঞ্চজন সাগরে আটক রেখেছিল। সান্দিপনী মুনী পুত্রকে উদ্ধার করে আনার জন্য কৃষ্ণ ও বলরামকে অনুরোধ করেছিলেন। গুরুদেবের আদেশ পালন করে শ্রীকৃষ্ণ দৈত্য শঙ্খাসুর পঞ্চজনকে বধ করে মুনীর পুত্রকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। এতে মুনিসহ সকলেই অত্যন্ত প্রসন্ন হন। তাই মুনির কন্যা গুন্ডিচাদেবী শ্রীকৃষ্ণের প্রকৃত পরিচয় জানতে পেরে তার সেবা করতে চেয়ে প্রার্থনা করেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ কথা দেন ‘নীলাচলে অবস্থানের সময় বছরে নয় দিন আমি তোমার সেবা গ্রহণ করবো।’

স্কন্দপুরাণ থেকে জানা যায়, গুন্ডিচাদেবীকে দেয়া কথা রাখতেই জগন্নাথদেব তার পরমভক্ত মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্নকে আদেশ দিয়েছিলেন, ‘আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়ায় যদি পুষ্যা নক্ষত্র পড়ে, তাহলে ঐ দিনটিতে সুভদ্রার সঙ্গে আমাকে ও বলরামকে রথে আরোহন করিয়ে গুন্ডিচা মন্ডপে নিয়ে যাবে।’ আর তাই গুন্ডিচা মন্দিরে নয় দিন অবস্থানের পর ফেরার পালা। আর তাই শুক্লা দশমীতে উল্টোযাত্রা।

গুন্ডিচা মন্দিরে অবস্থানের সময় লক্ষ্মীদেবী জগন্নাথদেবের সাথে দেখাও করতে গিয়ে ছিলেন কিন্তু দয়িতাপতিরা তাঁকে প্রবেশ করতে দেননি। গুন্ডিচা মন্দির থেকে ফেরার সময় ভোগারতি নিবেদন করা হয়। কিছুক্ষণ চলার পর অর্ধমসিনি মন্দিরের কাছে যাত্রা বিরতি করা হয়। সেখানে গুন্ডিচাদেবীর দেয়া পোড়া পিঠার ভোগ নিবেদন করা হয়। জগন্নাথদেব পোড়া পিঠা খাওয়ার পর আবার যাত্রা শুরু হয়। শেষে রথ মন্দিরের কাছে পৌঁছালে লক্ষ্মীদেবী রাজা জগন্নাথদেবকে অভিমান নিয়ে দর্শন করতে আসেন।

কারণ এ যাত্রায় লক্ষ্মীদেবীকে সাথে নেয়া হয়নি। এই লক্ষ্মী-নারায়ণ ভেটের পরপরই মন্দিরের বাইরেই হয় অধরপনা ভোগ। অপমানিত লক্ষ্মীদেবী মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেন। তিনি জগন্নাথদেবের দেয়া মূল্যবান উপহার সামগ্রীও গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। অনেক কাকুতি-মিনতির পর লক্ষ্মীদেবীর অভিমান ভাঙ্গে। তিনি মন্দিরের দরজা খুলতে রাজি হন। পরে জগন্নাথদেব নিজ মন্দিরের রাজসিংহাসনে আসীন হন। রথযাত্রার মতো বিশাল অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে এভাবেই।

রথ যাত্রা অনুষ্ঠান পরিদর্শন করেন সহকারী পুলিশ সুপার (মতলব সার্কেল) ইয়াসির আরাফাত , মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মিয়া, মতলব পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ সারোয়ার সরকার লিখন।

এদিকে মহামারী করোনা কালীন সময়ে স্বয়ং ভগবান জগন্নাথ দেবের উল্টোবড়রথ যাত্রা অনুষ্ঠান সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তাই সকলের কাছে মন্দির কমিটি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

 

নিউজরুম বিডি২৪। 

 

   
%d bloggers like this: