দেখতে দেখতে শেষের পথে ইউরোপিয়ান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ। ২৪ দল নিয়ে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টে বাকি আছে এর মাত্র চার দল। প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ইউরোপের দুই জায়েন্ট স্পেন ও ফ্রান্স। তবে ইউরোতে এখন পর্যন্ত নকআউটে একাধিকবার এই দুই দল মুখোমুখি হলেও প্রথম বারের মতো সেমিফাইনালে লড়বে ফরাসিরা ও স্প্যানিশরা। যার কারণে ফুটবলপ্রেমীদের বাড়তি নজর থাকবে এই ম্যাচে।
ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় আজ রাত ১টায় মিউনিখের আলিয়াঞ্জ এরিনা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। এই ম্যাচকে কেন্দ্র করে ফুটবল উন্মাদনায় ভাসছে গোটা ইউরোপ। কেননা এবারের আসরের একমাত্র দল স্পেন, যারা এবারের আসরে এখন পর্যন্ত হারের মুখ দেখেনি। শতভাগ জয় নিয়ে জায়গা করে নিয়েছে সেমিফাইনালে। যা এক রেকর্ডও বটে। নিজেদের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে টানা পাঁচ ম্যাচ জয় তুলে নিয়েছে স্প্যানিশরা।
এছাড়াও কোয়ার্টার ফাইনালে শিরোপার অন্যতম দাবিদার এবারের আসরে স্বাগতিক জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়ে নিশ্চিত করে সেমিতে খেলার টিকিট। যার কারণে দুই বারের ইউরো চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের চেয়ে ফাইনালে ওঠার দৌড়ে তিন বারের ইউরো চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে এগিয়ে রাখছে অনেকে।
অন্যদিকে জার্মানিতে পা রাখার আগে ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে বলেছেন, ‘আমরা শিরোপার জন্য লড়াই করতে চাই, এবং শিরোপা জিততে চাই।’ তবে গ্রুপ পর্বে কিছুটা অগোছালো দেখালেও ধীরে ধীরে নিজেদের পরিণত করেছে ফরাসিরা। ২০১৬ সালে ইউরোর ফাইনালে যেই পর্তুগালের কাছে হেরে আক্ষেপ নিয়ে বাড়ি ফেরে ফ্রান্স। এবার কোয়ার্টার ফাইনালে সেই পর্তুগিজদের টাইব্রেকারে হারিয়ে নিশ্চিত করে সেমিফাইনালে খেলার টিকিট।
তবে ফাইনাল কঠিন পরীক্ষা দিয়ে হবে এমবাপ্পে-গ্রিজম্যানদের। সেটা এই দুই দলের অতীতের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়। যদিও ১৯৮৪ সালে ইউরোর ফাইনালে স্পেনকে ফাইনালে ২-০ গোলে হারিয়ে প্রথম বারের মতো ইউরোপ ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে ফ্রান্স। অন্যদিকে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৩৬ বার মুখোমুখি হয় ফ্রান্স ও স্পেন। সেসব দেখায় জয়ের পাল্লা ভারী স্প্যানিশদের। লুইস দে লা ফুয়েন্তের শিষ্যদের ১৬ জয়ের বিপরীতে দিদিয়ের দেশমের শিষ্যদের জয় ১৩টি ম্যাচে। বাকি সাতটি ম্যাচ ড্র হয়। তবে ফ্রান্সের সমর্থকদের স্বস্তির খবর হতে পারে স্পেনের বিপক্ষে ফ্রান্সের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স। এই দুই দলের সবশেষ তিন দেখায় ফরাসিদের দুই জয়ের বিপরীতে স্প্যানিশদের এক জয়। সেই সঙ্গে এই দুই দুলের শেষ দেখা হয়েছে ২০২১ সালের অনুষ্ঠিত হওয়া ইউরোপা নেশনস লিগের ফাইনালে। সেই ম্যাচে স্পেনকে হারিয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরে ফ্রান্স। যদিও সেই দলের বেশির ভাগ ফুটবলারই নেই এবারের আসরে। তবু এই ম্যাচে নিজেদের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাইবে দেশমের শিষ্যরা।
ট্রাম্প কার্ড
ফ্রান্সের বিপক্ষে এই ম্যাচে স্প্যানিশদের ট্রাম্প কার্ড হতে পারে ১৬ বছর বয়সি স্প্যানিশ তারকা লামিন ইয়ামাল। এবারের আসরে কোনো গোলের দেখা না পেলেও তিনটি গোলের অবদান এই তরুণ ফরোয়ার্ডের। এছাড়াও এই ম্যাচে ফরাসিদের দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারেন আরেক স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড নিকো উইলিয়ামস। এবারের আসরে একটি গোল ও একটি এসিস্ট করেন ২১ বছর বয়সি এই ফুটবলার। দুই পাশ থেকে এই দুই তরুণ ফরোয়ার্ড আক্রমণে গেলে কঠিন পরীক্ষা দিতে হতে পারে ফরাসি ডিফেন্ডারদের।
অন্যদিকে আজ রাতে স্প্যানিশ ডিফেন্ডারদের কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারেন ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। যদিও এবারের আসরে চার ম্যাচ খেলে এখন পর্যন্ত কোনো ঝলক দেখাতে পারেননি সদ্য রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখানো এই তারকা। দেখা পেয়েছেন মাত্র একটি গোলের। তাও সেটা গ্রুপ পর্বে পোল্যান্ডের বিপক্ষে। যার কারণে এই ম্যাচে নিজের সেরাটা নিঙড়ে দিয়ে এই তারকা চাইবেন দলকে শিরোপার আরো কাছে নিয়ে যেতে। সেইসঙ্গে প্রথম বারের মতো নিজে ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে।