মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার টমাস অ্যান্ড্রস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তিনি সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসন ত্বরান্বিত করতে বিশেষ র্যাপোর্টিয়ারের সহায়তা চেয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আলোচনার সময় গত মাসে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের ফাঁকে রোহিঙ্গা-সংকট নিয়ে তিন দফা প্রস্তাবের জন্য রোহিঙ্গাদের তৃতীয় কোনো প্রধান উপদেষ্টার প্রশংসা করেন বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার। জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার অ্যান্ড্রুস বলেন, রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা একটি ‘বিশাল সংকট’ তৈরি করেছে এবং রোহিঙ্গাসহ বাস্তুচ্যুত ও ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন। মিয়ানমারের অন্তত ৩.১ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যার মধ্যে কয়েক হাজার রাখাইন রাজ্যে রয়েছে, যেখানে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো বছরের পর বছর ধরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা রাখাইনে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যা ইতিমধ্যেই দেশের দক্ষিণ-পূর্ব কক্সবাজার সীমান্ত জেলাগুলোতে এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গাকে ক্যাম্পে আশ্রয় দিচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস রাখাইনে বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য ‘জাতিসংঘের দ্বারা নিশ্চিত একটি নিরাপদ অঞ্চল’ তৈরি এবং তাদের সমর্থন করার উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি হবে ‘তাদের সাহায্য পাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায়’। রাখাইনের সংকট সমাধানের জন্য এটি একটি ‘ভালো সূচনা’ হতে পারে এবং এটি হাজার হাজার নতুন শরণার্থীকে বাংলাদেশে প্রবেশে বাধা দিতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা রাখাইনে সহিংসতা ও বাস্তুচ্যুত মানুষের বিষয়ে আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনারও পরামর্শ দেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার বিষয়ে আইসিসি তদন্ত এবং বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিপ্লব নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে গতকাল তার তেজগাঁওয়ের কার্যলয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রমিজ সেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, তারা দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও সামরিক সহযোগিতার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া তারা রোহিঙ্গা সংকট এবং দুই দেশে আরো বেশি করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ বিনিময়ের বিষয়েও আলোচনা করেছেন।