উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের উদ্দেশকে সামনে রেখে সংশোধন হতে যাচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০। যত্রতত্র মানহীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ঠেকাতে এ আইনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের শর্তগুলো আরো কঠোর করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। চলতি বছরের মধ্যেই এ আইন বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সংশোধনীর খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের (মাউশি) শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা ইত্তেফাককে এ তথ্য জানিয়েছেন।
মাউশি সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর সংশোধনীর জন্য খসড়া প্রস্তুত করতে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নিয়ে একাধিক কর্মশালা করার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে গত মঙ্গলবার একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কর্মশালায় মাউশির সিনিয়র সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, অর্থ বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ, কৃষি মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
বিভাগের সিনিয়র সচিব ও সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানও সভায় উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন এমন একজন সদস্য যিনি দৈনিক ইত্তেফাককে জানান, আইনের সংশোধনীতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনা, সাময়িক অনুমতির মেয়াদ, পাঠক্রম কমিটি, শিক্ষা কার্যক্রম ও মান নিশ্চিতকরণ, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের কোর্স পরিচালনা বা ক্যাম্পাস স্থাপন, শিক্ষার্থী ফি, বেতন কাঠামো ও চাকরি প্রবিধানমালাসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এতে করে আইনের মূল বিষয়গুলো ঠিক থাকলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পেতে হলে আগের চেয়ে কঠোর শর্তের আওতায় আসতে হবে।
বর্তমান আইনের আলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের জন্য প্রথমে সাময়িক অনুমতি নিতে হয়। এরপর প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে ২৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের নিজস্ব বা ভাড়া করা ভবন, ন্যূনতম তিনটি অনুষদ এবং এসব অনুষদের অধীন কমপক্ষে ছয়টি বিভাগ নিশ্চিত করতে হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সংরক্ষিত তহবিলে কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা যে কোনো তপশিলি ব্যাংকে জমা রাখাসহ আরো ২২টি শর্ত পূরণ করতে পারলে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যায়। এসব শর্তের ফাঁক গলিয়ে অনুমোদন নেওয়ার পরেও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় পরবর্তীতে তাদের মান ধরে রাখতে পারে না। এ কারণেই এ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব ড. ফরহাদ হোসেন জানান, উচ্চশিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সংশোধিত আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। তবে এ খসড়া চূড়ান্ত করতে বেশ কয়েকটি কর্মশালা প্রয়োজন হবে। আইনে কতটা পরিবর্তন আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার আগে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে সেটি বলা যাচ্ছে না। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান শর্তগুলোর পাশাপাশি কিছু কঠোর শর্ত যুক্ত হতে পারে। এছাড়া অনুমোদন পাওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান যাতে নিম্নমুখী না হয় সেদিকে নজর রেখেও আইনের ধারায় কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।
উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়ানো ও শিক্ষার্থীদের বিদেশে চলে যাওয়া নিরুত্সাহিত করতে ১৯৯২ সাল থেকে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়া শুরু হয়। বর্তমানে দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৫টি, যার মধ্যে কয়েকটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান ভালো থাকলেও বর্তমানে অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমন কি কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা খুবই খারাপ, যা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একাধিক তদন্ত প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে।