সাভারের আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৪৬ জনকে গুলি করে হত্যার পর মরদেহ ভ্যানে তোলা এবং আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার `মাস্টারমাইন্ড’ আশুলিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করার কথা রয়েছে।
গতকাল বুধবার রাতে তাকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় আনা হয়। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। বর্তমানে সায়েদকে শাহবাগ থানায় রাখা হয়েছে।
গ্রেপ্তার আতঙ্কে এতদিন গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। আশুলিয়ার এ ঘটনায় নিজের দায় এড়াতে বিভিন্ন কৌশল ও ছলনার আশ্রয় নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি তার।
খোদ পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নিজেকে আড়াল করতে নানা কৌশল খাটিয়েও শেষ রক্ষা না হওয়ায়, যে কোনো মুহূর্তে অবৈধ পথে দেশত্যাগের পরিকল্পনা করেন সায়েদ। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ইমিগ্রেশনসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তার বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়। এরই জেরে গতকাল রাতে কক্সবাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে ৫ সেপ্টেম্বর আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৪৬ জনকে গুলি করে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, ২১ পুলিশ সদস্যসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন-
আবেদনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক , সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মাদ আলী আরাফাত, সাভার-আশুলিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম, তৎকালীন সরকারের কতিপয় মন্ত্রী, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি হারুন অর রশিদ, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ, সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত এসপি মোবাশ্বিরা জাহান, সাবেক এসপি আব্দুল্লাহহিল কাফি, ঢাকা জেলা উত্তরের সাবেক ডিবি পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার ওসি (তদন্ত) নির্মল চন্দ্র, ওসি এএফএম সায়েদ আহমেদ, এসআই আফজালুল, এসআই জলিল, এসআই মো. রাকিবুল এসআই আবুল হাসান, এসআই হামিদুর রহমান, এসআই নাসির উদ্দিন, এসআই আব্দুল মালেক, এএসআই সুমন চন্দ্র গাইন, এএসআই বিশ্বজিৎ রায়, কসস্টেবল মুকুল, কনস্টেবল রেজাউল করিমসহ কতিপয় পুলিশ সদস্য, আশুলিয়া থানার আওয়ামী লীগ সভাপতি ফারুক হাসান তুহিন ওরফে তুহিন কুলু, ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নাদিম হোসেন, যুবলীগের আহ্বায়ক কবির হোসেন সরদার, ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. শামীম হোসেন, যুবলীগের আলমগীর হোসেন, ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ, সেক্রেটারি টিটু, সাভার ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, সাভার আওয়ামী লীগের আলী হায়দারসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্যরা।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট আশুলিয়ার বাইপাইলে ছাত্র-জনতার মিছিলে ১ থেকে ১২ নম্বর আসামির নির্দেশে ১৩ থেকে ৩৬ নং আসামিরা নির্বিচারে গুলি চালালে আহনাফসহ ৪৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। গুলিবিদ্ধ লাশগুলো ১৩ থেকে ১৬নং আসামিসহ অজ্ঞাতনামা পুলিশ সদস্য ময়লার বস্তার মতো করে ভ্যানে তোলেন। থানার পাশে পুলিশের একটি গাড়িতে পেট্রোল দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে তাদের লাশ পুড়িয়ে দিয়ে গণহত্যার নির্মম ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন।