ছিলেন ইয়াবা জোন টেকনাফের ওসি। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তুলে আনতেন যাকে-তাকে। টাকা দিলে ছাড়া পেতেন কেউ কেউ, টাকায় বনিবনা না হলে মাদককারবারি দেখিয়ে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শেষ করে দিয়েছেন অনেকের জীবন। এই ওসি আর কেউ নন, তিনি প্রদীপ কুমার দাশ, যিনি এখন মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে রয়েছেন।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। ওই হত্যাকাণ্ডের আগে থেকেই আলোচনায় ছিলেন প্রদীপ, সমালোচিত ছিলেন একের পর এক ক্রসফায়ার আর কঠোরতার জন্য। টেকনাফে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন আলোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তা। বর্তমানে মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিয়ে কারাগারের রয়েছেন ওসি প্রদীপ। জানা গেছে, তাকে দেখতে আসছেন না কোনো আত্মীয়স্বজন।
ওসি প্রদীপ এখন কোন কারাগারে, কীভাবে সময় কাটান, আগের অপকর্ম মনে করে তার মধ্যে কোনো অনুতাপ আছে কি না বা রায় কার্যকর হতে কেন দেরি হচ্ছে, তার স্ত্রী চুমকিই বা এখন কোথায়- এসব বিষয় নিয়ে কৌতূহল রয়েছে সাধারণ মানুষের মনে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ওসি প্রদীপ গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারেই রয়েছেন। একই কারাগারে রয়েছেন পরিদর্শক লিয়াকত আলীও। প্রথমে জেল কোড অনুযায়ী, ওসি প্রদীপ ডিভিশন সুবিধা পেতেন। তবে রায়ের পর অর্থাৎ ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ডাদেশের পর থেকে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় ডিভিশন সুবিধা বাতিল হয়ে যায় প্রদীপের। বর্তমানে সাধারণ কয়েদিদের মধ্যে থাকছেন ওসি প্রদীপ। এদিকে, প্রদীপের দুর্নীতির টাকা রক্ষা করতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন তার স্ত্রী চুমকি। দুর্নীতির মামলায় ২১ বছর দণ্ডিত হয়ে তিনিও কারাগারে।
কারা সূত্র বলছে, মৃত্যুদণ্ডাদেশ মাথায় নিয়ে কারাগারে দিন পার করছেন ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলী। রাত-দিন অনেকটা শুয়ে-বসেই দিন কাটছে তাদের। তবে এত অপকর্মের পরেও অনুতপ্ত নন প্রদীপ, যদিও ফাঁসিতে ঝুলতে হবেই, এমন শঙ্কাও আছে তার।
কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ওসি প্রদীপ কাশিমপুর কারাগারেই রয়েছেন। ফাঁসির আসামি হওয়ায় বর্তমানে তিনি ডিভিশন সুবিধা পাচ্ছেন না। কারাগারে চুপচাপ আছেন ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলী। খাওয়া-দাওয়া আর শুয়ে-বসে সময় পার করছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের এক কর্মকর্তা জানান, এখনো ওসি প্রদীপ আশা নিয়ে আছেন যে, ফাঁসির চূড়ান্ত রায় পেলে তিনি খালাস পাবেন। তার সঙ্গে যেসব বন্দি আছেন তাদের কাছে মাঝে মধ্যে আক্ষেপ করেন, তার শঙ্কা আদালতের সবশেষ রায়ে তাকে ফাঁসিতেই ঝুলতে হবে।